মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন রাজশাহীতে চাষিরা

Ads

আম ছাড়া অন্যান্য ফল চাষে তেমন আগ্রহ ছিল না রাজশাহীর কৃষকদের। কয়েক বছরের ব্যবধানে চিত্র পাল্টেছে। বর্তমানে রাজশাহী জেলায় ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে মাল্টা। ফলে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরাও।

একেক ধরনের ফলের জন্য একেক এলাকার মাটি ও পরিবেশ বিশেষ উপযোগী হলেও পরিশ্রমের মাধ্যমে এই ধারণা পাল্টে দিয়েছেন কর্মঠ মানুষেরা। প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে নিরন্তর এগিয়ে যাচ্ছে তারা। এ দিন বদলের পালায় থেমে থাকেনি কৃষি। যান্ত্রিক সভ্যতায় হাল-গরু বিদায় নিলেও সেই জায়গা দখলে নিয়েছে ট্রাক্টর, হারভেষ্টার, টান্সপ্লান্টারসহ আধুনিক সব প্রযুক্তি।

বদলেছে ফসল ফলানোর কৌশল, সময়, বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে এখন চাষ হচ্ছে কমলা লেবু, স্ট্রবেরি, ড্রাগনফল, মাল্টা। দেশে কৃষকের আরেক ভরসা মাল্টা। যা এক দশক আগেও কৃষকের মাথায় আসেনি। তারা ভাবতেন পাহাড়েই শুধু মাল্টা চাষ হয়। বর্তমানে মাল্টা চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। মিলছে মোটা অংকের অর্থ।
ভারত, মিয়ানমার ও চীনে ব্যাপক মাল্টার চাষ হলেও বাংলাদেশে এই ফলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এদিকে রাজশাহী জেলার তানোর ও গোদাগাড়ীতে ব্যাপকভাবে বাড়ছে মাল্টার চাষ।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিগত অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে মাল্টা চাষ প্রায় ৩ গুণের বেশি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ করা হয়েছিল। সে বছরে ৫০ মেট্রিকটন মাল্টা উৎপাদন হয়। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে দ্বিগুণে পৌঁছে এই ফলের চাষ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১২৪ হেক্টর জমিতে ১৬০ মেট্রিকটন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেড়ে ১৪৮ হেক্টরে পৌঁছায়। উৎপাদন হয় ২২২ মেট্রিকটন মাল্টা। কৃষি কর্মকর্তাদের ধারণা আগামী এক বছরে জেলায় ৩০০ হেক্টরের কাছাকাছি জমিতে মাল্টা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন চাষিরা। গোদাগাড়ীতে ২০১৭ সালে মাত্র ১৭ হেক্টর মাল্টা চাষ হতো। বর্তমানে উপজেলায় ১০২ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হচ্ছে। অনেক কৃষক মাল্টা চাষ থেকে দূরে সরেও যাচ্ছে। পরিশ্রমী কৃষক এবং নিয়মিত পরামর্শ ছাড়া মাল্টা চাষ করা সম্ভব নয়।

পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া রোগের চিকিৎসা বিষয়ে জানতে চাইলে এই কৃষি কর্মকতা বলেন, পাতা হলুদ হওয়ার পরেও চিকিৎসা আছে। তাঁরা চাষিদের সেই পরামর্শ দিচ্ছেন। যাঁরা পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছেন, তাঁদের বাগান ভালো আছে। গাছের অণুখাদ্য যদি সঠিক পরিমাণে, সঠিক সময়ে না প্রয়োগ করা হয় তাহলে গাছের সমস্যা হয়। জিঙ্গ, ফসফেট, কপার, ম্যাগনেমিয়াম সালফেট স্প্রে করলে গাছের পাতা হলুদ হওয়া রোধ করা যায়। তাছাড়া অতিরিক্তি হলে গাছের গোড়ায় চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.শামছুল হক বলেন, মাল্টাগাছের পাতা হলুদ হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত। বিষয়টি তিনি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকেও জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, মাল্টা ধান, পাট আমের মতো নয়। বিশেষ যত্ন নিতে হবে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ততরের পরামর্শ নিতে হবে সার্বক্ষণিক। তা ছাড়া হবে না। রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী এই দু-উপজেলায় মাল্টা চাষ হয়। বর্তমানে মাল্টাচাষ বছর বছর বাড়ছে।

Ads
আপনি এটাও পছন্দ করতে পারেন
Loading...