জিকের সেচ পাম্প বন্ধ ও সরেজমিন বাস্তবতা

Ads

কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, ও মাগুরা জেলার ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের লক্ষ্যে ১৯৫১ সালে পরিচালিত প্রাথমিক জরিপের পর ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার প্রকল্পটি জিকে সেচ (গঙ্গা-কপোতাক্ষ) অনুমোদন করে৷ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া পওর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানাচ্ছেন, ৪ টি জেলার ১৩ টি উপজেলায় জিকে সেচ প্রকল্পটি চলমান আছে৷ প্রকল্পের তথ্যমতে, বর্তমান প্রকল্পের আওতায় ৯৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব ছিলো৷ দুটি মেশিন আগে থেকে নষ্ট থাকায় চলতি বোরো মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার সক্ষমতা ছিল প্রকল্পের। শেষ পাম্পটি নষ্ট হওয়ায় এবার সেই লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হলো না।

অধুনা একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জিকের সব পাম্প বন্ধ বোরো রোপনে সেচ সংকট’ প্রতিবেদনের আলোকে আমাদের প্রতিনিধি সরেজমিনে কৃষক, কৃষি উদ্যোক্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলাপচারিতায় তুলে এনেছেন জিকে সেচ প্রকল্পের বাস্তব চিত্র৷

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার কৃষক যখন পাশের বিদ্যুৎ চালিত সেচের মালিকের সাথে বোরো ধানের জমিতে সেচের বন্দোবস্ত করছিলেন তখন তার কথা আমাদের প্রতিবেদকের কথা হয়৷ কৃষক জিন্নাহ মিয়া বলছিলেন, জমি প্রস্তুতির সময়েই শুনলাম এবার সময় মতো জিকের পানি আসবেনা৷ পাম্প নাকি নষ্ট। নষ্টটষ্ট কিছু না, আসলে আমাদেরও দোষ আছে৷ পানির দাম কৃষক পরিশোধ করেনা৷ প্রায় সবাই বাঁকি রাখে। সেজন্য সময় মতো সেচের পানি আর আসবেনা৷ এই যে এখন জমিতে পানি নেয়ার বন্দোবস্ত করতে আসছি এখানে কিন্তু ঠিকই কড়ায়গণ্ডায় টাকা শোধ করবো কিন্তু জিকে সেচ সমিতির টাকা আমরা বাঁকি রাখি৷ কবে নাগাদ যে সেচ চালু হয় কেউ জানিনা প্রকল্পের লোকও জানেনা শুনেছি ঢাকায় খবর দিছে কিন্তু ক্ষতিটা আমাদেরই হবে এখন৷ বেশি দামে পানি কিনতে হবে৷

জিকের সেচ পাম্প বন্ধ ও সরেজমিন বাস্তবতা৷
জিকের সেচ পাম্প বন্ধ ও সরেজমিন বাস্তবতা

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের পাম্প ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেছেন, কবে নাগাদ জিকে সেচ পাম্প চালু করা যাবে তা নিশ্চিত করে আমরা বলতে পারছিনা৷

ঝিনাইদহের কৃষি উদ্যোক্তা আহসানুল ইসলাম ডন জিকে সেচ প্রকল্পের তার দেখা ভিতর বাহিরের কিছু কথা জানালেন৷ ডনের মতে, এবছর যে জিকে সেচের পানি একটা পাম্প থেকে শুরু হয়েও বন্ধ হয়ে গেছে৷ পুরো ক্যানেল শুকনো প্রায়৷ আগের দুইটা পাম্পও বন্ধ অনেক বছর হলো৷ ভোগান্তি যা কৃষকের৷ ফসল উৎপাদন ব্যয় এবছর বাড়বে সেচ অব্যবস্থাপনার জন্য৷ এর জন্য অনেকটা দায়ী জিকে কৃষক সমিতিও৷ তাদেরকে সক্ষম হবার কথা এতোদিনে৷ নিজেদের ব্যবস্থাপনা নিজেদের করার শর্ত আছে এই প্রকল্পে৷ কিন্তু এই সমিতি নিয়মিত পানির দামই পরিশোধ করেনা আবার এই ক্যানেল গুলোর আশেপাশে পুকুর কেটে পানি টেনে নিয়ে অন্য প্রজেক্ট করছে সেসবের দিকে কারও নজর নাই৷ অনেক পাইপ জং ধরে নষ্ট হয়ে জলাশয়ে পানি বের হয়ে যায়৷ কৃষক, কৃষক সমিতি, প্রকল্প, পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ স্থানীয় সরকার কারও সাথেই কারও সমন্বয় নাই৷ পাকিস্তান আমলের একটা প্রকল্পের রিভিউ করা হয়নি। নিয়মনীতি সব পুরনো৷ এদিকে বিএডিসিও এলাকায় যুগোপযোগী সেচ প্রকল্প গড়ে তুলেছে ফলে সমন্বিত ভাবেই জিকে সেচ প্রকল্প নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই একটা দীর্ঘমেয়াদী যুগোপযোগী পরিকল্পনা গ্রহন জরুরি।

হরিণাকুন্ডু উপজেলার জিকে সেচ প্রকল্পের কৃষক হামিদ স্যালো মেসিনের পানি দিয়ে জমি তৈরি করে চারা লাগানোর ফাঁকে বলছিলেন, এই সময়ে ধান থোপানোর কথা কিন্তু জিকের পানি না পাওয়ায় দেরি হয়ে গেলো। ফলনও কম হতে পারে৷ স্যালোর পানি ঠিকঠাক পাওয়াও যায়না দামেও বেশি৷ সবদিক দিয়েই এবার ধান চাষে ৬/৭ হাজার টাকা বেশি ব্যয় হবে মনে হচ্ছে৷

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, জিকের পানি আসতে বেশ কিছুদিন সময় লাগতে পারে। আমি ঢাকায় জানিয়েছি। বিভিন্ন মাধ্যমে কৃষকদেরও খবর পৌঁছেছি বোরো ধান রোপণ করার জন্য।

Ads
আপনি এটাও পছন্দ করতে পারেন
Loading...