গ্রীষ্মকালীন শস্যের সাফল্যেই নির্ভর করছে দক্ষিণ এশিয়ার ভাগ্য

Ads

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) যখন দক্ষিণ এশিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে, ঠিক তখনই গ্রীষ্মকালীন শস্যচাষ শুরু করেছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। মৌসুমি বৃষ্টিভার মেঘ-মাল্লারের পর্যাপ্ত বর্ষণে অনেক এলাকাতেই হুমকির মুখে পড়তে পারে ফসল। কারণ এই সোনালী ফসল ঘরে তোলার ওপরই ঝুলে আছে কোটি কোটি কৃষক আর লাখো কোটি জনতার ভবিষ্যৎ।

মৌসুমি বৃষ্টিকে কেন্দ্র করেই লকডাউনে প্রভাবিত কৃষকেরা গ্রীষ্মকালীন শস্য রোপণ শুরু করেছেন। ভারত মহাসাগর থেকে মৌসুমি মেঘের আগমনে উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শুরু হয়েছে বর্ষা। গ্রীষ্মকালীন শস্য রোপণের জন্য এই সময়ের বৃষ্টিপাত খুবই জরুরি এ অঞ্চলের কৃষিকাজে। ইতোমধ্যেই বর্ষার আগমনকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং নেপালের কৃষকেরা গ্রীষ্মকালীন ফসলের চারা রোপণ শুরু করেছেন।

আলোচিত দেশগুলোর কৃষিখাতকে কোভিড-১৯ মহামারি ইতোমধ্যেই ব্যাপক প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশে ন্যায্য দর থেকে বঞ্চিত হয়েছেন চাষিরা। পরিবহন ও শ্রমিক সঙ্কটে আগের মৌসুমের অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে শস্যক্ষেতেই। দেশভেদে অবশ্য আঞ্চলিক কৃষি বিপর্যয়ের ভিন্ন চিত্র রয়েছে।

তবে একটা কথা সকলের জন্যই প্রযোজ্য। তা হলো- চলমান এই দুর্যোগে এবারের গ্রীষ্মকালীন ফসলের সঠিক ফলন, আলোচিত চার দেশের জন্যেই ভীষণ গুরুত্বের। চলতি মৌসুমের ফসল উত্তোলনের ওপর নির্ভর করবে, এসব দেশের আর্থ-সামাজিক ও খাদ্য নিরাপত্তার মতো বিষয়।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং নেপাল, দক্ষিণ এশিয়ার এই চার দেশে ইতোমধ্যেই লাখ লাখ জনগোষ্ঠী মানসম্মত খাদ্যক্রয়ের সামর্থ হারিয়েছেন করোনা সৃষ্ট লকডাউন ও বেকারত্বে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দেওয়া সাম্প্রতিক তথ্যাবলীও দক্ষিণ এশিয়ায় লকডাউনের এমন প্রভাব স্পষ্ট করেই তুলে ধরেছে। অর্থনীতির আকারও সংকুচিত হয়েছে, কমেছে শিল্পোৎপাদন ও ভোক্তা চাহিদা এবং সেবা খাতের বিকাশ।

তাই শেষ আশা; আদি ও অনাদিকালের পেশা কৃষির ওপর। মৌসুমি বৃষ্টিভার মেঘ-মাল্লারের পর্যাপ্ত বর্ষণ আর সোনালী ফসল ঘরে তোলার ওপর ঝুলে আছে কোটি কোটি কৃষক আর লাখো কোটি জনতার ভবিষ্যৎ।  কারণ গ্রীষ্মকালীন ফসলের ভালো ফলন এ অঞ্চলের দমবদ্ধ অর্থনীতিতে নতুন প্রাণসঞ্চার করতে পারে।

এই চার দেশে সার্বিক অর্থনীতিতের কৃষিখাতের অবদান একেক মাত্রার। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাবে নেপালের ক্ষেত্রে যা ২৫, বাংলাদেশের জন্য তা ১৩ শতাংশ। ভারতে এই হার ২০১৮ সালের হিসাবে ছিল ১৮ এবং পাকিস্তানে ২৪ শতাংশ। অবশ্য শুধু জিডিপি অবদানের বিচারেই কৃষির গুরুত্ব বোঝানো সম্ভব নয়। কারণ শ্রমঘন উৎপাদন খাত হওয়ায়, সবচেয়ে বেশি মানুষের স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মসংস্থান নির্ভর করে কৃষিকাজ, পশুপালন, খামার শিল্পসহ কৃষি নির্ভর খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের ওপর। উৎপাদন থেকে বিপণন নানা স্তরে লাখ লাখ দিনমজদুরের আয়-রোজগারের সংস্থান করে কৃষি।

ব্যয়বহুল শ্বেতহস্তিসম অবকাঠামো ভিত্তিক উন্নয়ন প্রবৃদ্ধির গল্প শোনালেও, শিল্পপতি-রাজনীতিবিদদের অগাধ-সম্পদ পরভূমে পাচার অব্যাহত থাকলেও- অর্থনীতির ঘানির যোগালটা কিন্তু ঠিকই টেনে চলে- এ অঞ্চলের কৃষকের দল।

তাই কৃষকের দুর্ভোগ অনুধাবন করাটা নেহাৎ শৌখিনতার পর্যায়ে না রেখে, তার দিকে আত্মিক উপলদ্ধির দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ সকলের। চলমান মহামারিতে গত শীতের মৌসুমের সব ফলস ঘরে তোলা, সংরক্ষণ আর বিক্রি নিয়ে নাজেহাল হয়েছে কৃষক। সম্মুখীন হন নজিরবিহীন লোকসানের। এই ঘটনা হয়েছে পুরো উপ-মহাদেশজুড়ে।

ঈশ্বর আচার্য নামে নেপালের মোরাং জেলার এক চাষি তার দুর্দশার কথা তুলে ধরেন এভাবে, “গত কয়েক মাস ধরে নিজের খামারের গরুগুলোকে ক্ষেতের সবজি খাওয়াচ্ছি। কী করব? কার কাছে বেচব? কোথায় বেচব? শেষ সঞ্চয়টুকু নিঙরে নিয়েছে এ মহামারি।”

এদিকে গ্রীষ্মকালীন বীজবপণের সময়েই কৃষি খামারগুলোয় প্রয়োজনীয় নানা উপকরণের সঙ্কটের খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে, উৎপাদনের নানা অনুষঙ্গের দাম বৃদ্ধির খবর সামনে আসছে।

এ ব্যাপারে ভারতের রাঁচি ভিত্তিক ট্রান্সফর্ম রুরাল ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের (ট্রিফ) কর্মকর্তা অশোক কুমারের বক্তব্য পরিস্থিতির ভয়াবহতা নির্দেশ করে। তার সংস্থাটি ভারতের দরিদ্রতম রাজ্যগুলোর গ্রামীণ উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে।

অশোক কুমার বলেন, “গ্রীষ্ম আসতে না আসতেই ঝাড়খণ্ড ও বিহার রাজ্যে শস্যবীজের দর ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এই অবস্থায় বীজ সংগ্রহে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা।”

নয়াদিল্লি ভিত্তিক তৃণমূল নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘সত্যব্রত আচার্য অব প্রফেশনাল এসিস্ট্যান্ট ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন’ জানায়, “ভারতের শস্যের ঝুড়ি বলে পরিচিত রাজ্য; পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের বড় কৃষকেরা এই ধরনের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি থেকে কিছুটা সুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছেন। দরবৃদ্ধির কারণে বেশি পরিমাণের বীজ কেনার অগ্রিম পদক্ষেপের মাধ্যমে- দাম পরিশোধের সময় তারা কিছুটা ছাড়ও পান।”

কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে দক্ষিণ ভারতেও। তবে অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং কর্নাটক রাজ্যের কৃষি সমবার সমিতিগুলো দরবৃদ্ধি মোকাবিলায় যথার্থ পদক্ষেপ নিয়ে সফল হয়। এ সম্পর্কে নিশ্চিত করে হায়দরাবাদ ভিত্তিক ওয়াটারশেড সাপোর্ট সার্ভিসেস অ্যান্ড আক্টিভিটিজ নেটওয়ার্ক (ওয়াসান)।

পাকিস্তানেও কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। দেশটির কৃষিখাত বিপুল পরিমাণে আমদানিকৃত রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ওপর নির্ভরশীল। চলমান মহামারিতে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায়, দাম বেড়ে গেছে উপকরণের।

দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের একজন কৃষক ওয়াকাশ গোন্ডাল বলেন, এ মূল্যবৃদ্ধি প্রান্তিক থেকে শুরু করে মধ্য পর্যায়ের চাষিদের সীমিত লাভকে শুষে খাবে।

পাকিস্তানের জাতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা খালিদ জামিল জানান, “পরিস্থিতির শোচনীয়তায় সাড়া দিয়ে পাকিস্তান সরকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে কিছু উপকরণ কিনতে। সেচের জন্য জ্বালানি কেনার ক্ষেত্রেও এধরনের আরেকটি আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হবে। পাকিস্তানের কৃষকদের মোট উৎপাদন খরচের ৩০ শতাংশই খরচ হয় সেচের জ্বালানি ক্রয়ে। তাই এ খাতে সরকারি সহায়তা তাদের অস্তিত্ব ধরে রাখার পক্ষে সহায়ক হবে।”

নেপালে এখন চলছে সারের তীব্র সঙ্কট। যার মূলে রয়েছে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি কেন্দ্রিক বিরোধ। হিমালয়কন্যা নেপাল চারপাশ দিয়ে স্থলসীমানা বেষ্টিত দেশ হওয়ায়, চীন ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা সিংহভাগ সার আনে প্রতিবেশী ভারতের বন্দর ব্যবহার করে।

এই মুহূর্তে নেপালের আমদানি করা ৫০ হাজার টন সার আটকা পড়ে আছে কলকাতা বন্দরে। আরও ২১ হাজার টন পড়ে আছে গুজরাট বন্দরে। এ মুহূর্তে তা খালাস করা হলেও; নেপালে এগুলোর চালান পৌঁছাতে এক মাস সময় লাগবে। ফলে কৃষিখাতের ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়েই যাবে।

আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে নেপালের কৃষি মন্ত্রণালয়। এই অবস্থায় চলতি বছর সরকারি মজুদ থেকে প্রায় ৫ লাখ টন ভর্তুকি দেওয়া সার কৃষকদের কাছে বিক্রি করার কথা জানানো হয়, আলোচিত বিবৃতিতে।

সামগ্রিক সঙ্কটের কিছুটা আভাস মেলে পূর্ব নেপালের কৃষক আচার্যের ভাষ্যে, “সার সরবরাহকারীকে এখন ইউরিয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে- সে উত্তর দেয়; আমাদের কাছে নেই। ডায়ামনিয়াম ফসফেটের কথা জিজ্ঞেস করলে- আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পেয়ে যাব এমন আশ্বাস দেয়।”

তার আরও অভিযোগ দুই সপ্তাহ ধরে সারের লাইনে অপেক্ষা করে, তিনি প্রয়োজনের মাত্র ২৫ শতাংশ সার সংগ্রহ করতে পেরেছেন। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে লাইনে দাঁড়ানো অন্যদেরও।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব রাজ্যের পাকপাত্তান জেলার কৃষক আমির হায়াত ভান্দ্রা বলেন, “সবচেয়ে খারাপ ব্যবস্থা হচ্ছে কৃষকেরা নয়, উৎপাদিত ফসলের দাম নির্ধারণ করে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা। এই পরিস্থিতির জন্য সরকারও প্রচণ্ড মাত্রায় দায়ি। এর ফলে কৃষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। আবার চলমান সঙ্কটের মাঝে কৃষকদের একটু বাড়তি দাম পাওয়ার সুবিধে না করে দিয়ে, সরকার উল্টো ব্যবসায়ীদের বেশুমার আমদানির জন্য বাজার উন্মুক্ত করে দিয়েছে।”

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা- হয়ে উঠেছে অভ্যন্তরীণ অভিবাসী শ্রমিকদের বেকারত্বের তাড়নায় গ্রামে ফিরে আসা। ফসল উৎপাদনের মৌসুমে এদের অনেকেই জমানো পুঁজি দিয়ে সামান্য চাষাবাদ করতো। কিন্তু এখন সেই পুঁজি নিঃশেষিত। ফলে গ্রীষ্মকালীন শস্য উৎপাদনে অন্যের জমিতে মজদুরি করা ছাড়া অন্য উপায় নেই তাদের।

সমগ্র পাকিস্তানে যেসব চাষি; ধান, ভুট্টা, তুলা এবং চিনির মতো অর্থকরী ফসল উৎপাদনে জড়িত- তাদের আশার প্রদীপ ম্রিয়মাণ মৌসুমি বৃষ্টির স্বল্পতায়।

এর প্রভাব পড়বে অন্যান্য প্রধান শিল্পে। যেমন দেশটির তুলা শস্যের ফলনের ওপর নির্ভর করে স্থানীয় বস্ত্রবয়ন তথা টেক্সটাইল শিল্প। তুলা উৎপাদনে চলতি বছর কোনো বিশেষ সহায়তা দেওয়া হয়নি, বলেই অভিযোগ করেন ভান্দ্রা।

ভারত এবং পাকিস্তানের চাষিদের জন্য নতুন উপদ্রুপ হয়ে দেখা দিয়েছে পঙ্গপালের আক্রমণ। ইতোমধ্যেই এর আক্রমণে উজাড় হয়েছে দিগন্ত-বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত। উভয় দেশের কর্তৃপক্ষই চলতি জুলাইয়ে নতুন করে পঙ্গপালের উৎপাত বৃদ্ধির শঙ্কা করছেন।

এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ায় চলমান লকডাউনে শহর থেকে গ্রামমুখী হয়েছে লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিক। এর ফলে কিছু কিছু গ্রামে যেমন প্রয়োজনের তুলনায় মজদুরের সংখ্যা বেড়েছে, অন্যান্য স্থানে তার বিপরীতে; দেখা দিয়েছে ঘাটতি।

ভারতের দারিদ্র্যপীরিত রাজ্য ঝাড়খণ্ডে শহর থেকে ফিরে আসা মানুষের চাপে এভাবেই দিন-মজদুরদের সংখ্যাধিক্য দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ এবং নেপালের নানা গ্রামেও পরিলক্ষিত হচ্ছে একই চিত্র।

এলাকাভেদে ভূমি মালিকদের জন্য তা সুখবর হলেও, মজুরিতে ধ্বস নামায় তা অস্থায়ী কৃষি শ্রমিকদের জন্য বড় দুঃসংবাদ। উদাহরণস্বরূপ; বলা যায় বাংলাদেশের কথা। ‘বিগত এক দশকে দেশে কৃষি শ্রমের মূল্য বেড়েছিল। যাতে এখন ধ্বস নেমেছে’ বলে জানান রংপুর অঞ্চলের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক। ‘আগে প্রয়োজনীয় সংখ্যায় শ্রমিক যোগাড়ে হিমশিম খেতে হতো, কিন্তু এখন তার কোনো অভাব নেই’ যোগ করেন তিনি।

শহর থেকে বিপুল পরিমাণ মানুষ গ্রামে চলে আসায় মজুরিও কমে গেছে রাতারাতি, এমনটাই জানান এ কৃষক। শুধু বাংলাদেশে নয়, উত্তর ভারতের দরিদ্র রাজ্যগুলোতেও একই পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে, বলে নিশ্চিত করেন ট্রিফ কর্মকর্তা অশোক কুমার।

ভারত ও পাকিস্তানের অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল এবং শস্যঝুড়ি খ্যাত রাজগুলোতে এর বিপরীতে বিরাজ করছে ব্যাপক শ্রমিক সঙ্কট। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের কৃষি সমবায় সমিতিগুলো শ্রমিকদের নানা রাজ্য থেকে বাস ভাড়া করে আনছে এবং কাজ শেষে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছে।

বিশেষ করে, বর্ষায় ধানের চারা রোপণ কর্মী নির্ভর ও শ্রমসাধ্য কাজ হওয়ায় বাধ্য হয়েই এ উদ্যোগ নেয় তারা। শ্রমিক সঙ্কটের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই পাঞ্জাবে দৈনিক মজুরির পরিমাণও বেড়ে গেছে, বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় কৃষকেরা।

দক্ষিণ এশিয়ায় কৃষির প্রাণ মৌসুমি বৃষ্টি হলেও, একইসঙ্গে তা বন্যার মাধ্যমেও বিপুল ক্ষতি সৃষ্টি করে। চলতি বছরের দক্ষিণ-পূর্বমুখী মৌসুমি বৃষ্টিপ্রবাহ কেবল শুরু হলেও, ইতোমধ্যেই ভারতের আসাম, মেঘালয়, সিকিম, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, ভূটান এবং নেপালে ভারি বর্ষণের কারণে সৃষ্ট বন্যায় ৫০ জনের বেশি মারা গেছে। এদের মধ্যে ২৩ জন মারা গেছে আসামে এবং ১৮ জন নেপালে।

বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি তাই বাধ্য হয়েই প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের কৃষকদের। লালমনিরহারহাট জেলার তিস্তা নদীর অববাহিকা অঞ্চলের এক কৃষক আকরাম হুসেইন। তিনি বলেন, “বন্যার কথা মাথায় রেখেই গত দুই বছর ধরে বন্যা সহনশীল জাতের আমন ধানের আবাদ করছি।”

ভারতের বিহার রাজ্যের কৃষকরা অবশ্য এবার বন্যা মোকাবিলায় তেমন প্রস্তুতির সুযোগ পাননি-  কোভিড-১৯ মহামারির কারণে। মহামারির আগে প্রতিবছর এনিয়ে তাদের প্রস্তুতি ভালো থাকলেও, এবার হয়েছে তার ব্যতিক্রম। বাধাগ্রস্ত হয়েছে রাজ্য সরকারের নেওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও। বিহারের ৩০ শতাংশ বাঁধের সংস্কার ও ভাঙন মেরামতের কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। কোন কোন জায়গায় বাঁধের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ- তা জানাতে রাজ্য সরকারের একটি টুইটার একাউন্ট থেকে জনগণের প্রতি আহ্বানো জানানো হচ্ছে।

এসব প্রচেষ্টা কতদূর কাজে দেবে তা অচিরেই দেখা যাবে। দক্ষিণ এশিয়ার শস্যক্ষেতে বিধাতার আশীর্বাদ নামবে নাকি পুরো অঞ্চলে নতুন বিপদের পদধ্বনি নামবে, তাও নির্ধারণ হয়ে যাবে; অচিরেই।

Ads
আপনি এটাও পছন্দ করতে পারেন
Loading...