ইউরোপের কৃষি খাতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ

Ads

করোনা মহামারীতে বিশ্ব শ্রম বাজারে আতঙ্ক ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমন মুহূর্তে বাংলাদেশি এগ্রিকালচার সায়েন্স, হর্টিকালচার, প্ল্যান্ট বায়োলজি, বায়োলজি, এনিম্যাল হাজবেন্ডারি, ভেটেরিনারি সায়েন্সের শিক্ষার্থী এবং গ্র্যাজুয়েটদের কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তারা ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন এবং জার্মানির কৃষি খাতে কাজ করার সুযোগ পাবেন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মোহাম্মদ ফয়সাল-

সাধারণত ইউরোপিয়ন ইউনিয়নভুক্ত দেশে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ নাই বললেই চলে। সম্প্রতি ডেনমার্কের এক কনসালটেন্সি ফার্ম গ্লোবাল এডুকেশন ডেনমার্কের সাথে বাংলাদেশসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশ থেকে কৃষি, ভেটেরিনারি এনিম্যাল হাজবেন্ডারি শিক্ষার্থী এবং গ্র্যাজুয়েটদের এ অঞ্চলে কৃষি খাতে ট্রেইনি সরবরাহের চুক্তি সম্পন্ন হয়। এতে বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এবং গ্র্যাজুয়েট কাজের সুযোগ পাবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা: কৃষি শ্রমিক হিসেবে শিক্ষাগত যোগ্যতা কখনো বিবেচনায় নেওয়া না হলেও নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক এবং জার্মানির কৃষি খাতে কাজ করতে বাংলাদেশিদের কিছু যোগ্যতা পূরণ করতে হবে। যেমন-
১. বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এগ্রিকালচার সায়েন্স, হর্টিকালচার, প্ল্যান্ট বায়োলজি বা বায়োলজি, এনিম্যাল সায়েন্স, ভেটেরিনারি সায়েন্সের নির্দিষ্ট কিছু বিভাগে ন্যূনতম এক বছর বা ২ সেমিস্টার শেষ করতে হবে। জার্মান কৃষি ফার্মে কাজ করার জন্য ২ বছর বা ৪ সেমিস্টার শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন।
২. ১৮-৩০ বছরের মধ্যে থাকতে হবে।
৩. আইইএলটিএস স্কোর ন্যূনতম ৪ থাকতে হবে। বিশেষত ডেনমার্কের জন্য এটি বাধ্যতামূলক।
৪. আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।

চাকরির মেয়াদ: ১২ মাস থেকে ১৮ মাস। মনে রাখা দরকার, এটি পড়াশোনার একটা অংশ। মাসিক বেতন হিসাব করা হবে ইউরোপে একজন স্টুডেন্টের বেতন স্কেলে।

কাজের পরিধি: বিশেষত ৫টি খাতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যেমন-
• ডেইরি ফার্ম
• মিল্কিং ফার্ম
• পোল্ট্রি ফার্ম
• গ্রিন হাউজ এবং
• পিগ ফার্ম।

সুযোগ-সুবিধা: দেশ অনুযায়ী বেতন ও সুযোগ-সুবিধা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে-
ডেনমার্ক: প্রথম ৬ মাস ১৫৩০ ইউরো। পরবর্তীতে এটি দাঁড়াবে ১৭৮০ (২৫ বছরের নিচে), ২০৬০ (২৫ বছরের উপরে)।
জার্মানি: ঘণ্টাপ্রতি ৯.৩৫ ইউরো এবং মাসিক বেতন ১৭৬০ ইউরো (ট্যাক্সসহ), ট্যাক্স পরিশোধের পর এটি দাঁড়াবে ১১৩৭ ইউরো।
নরওয়ে: ১৫৫৮০ নরওয়েজিয়ান ক্রোনার (প্রায় ১৫৫০ ইউরো), ট্যাক্স পরিশোধের পর দাঁড়ায় ১৩২০০ নরওয়েজিয়ান ক্রোনার (প্রায় ১৩২০ ইউরো)।
সুইডেন: ১ম ৬ মাস ঘণ্টায় ৬০ সুইডিশ ক্রোনার। পরবর্তীতে এটি দাঁড়াবে ৮৪ সুইডিশ ক্রোনার। মাসিক হিসাবে প্রায় ১২০০ ইউরো থেকে প্রায় ১৫০০ ইউরো।

ধারাবাহিক প্রক্রিয়া
স্টেপ ১: এগ্রিকালচার সায়েন্স, বোটানি, হর্টিকালচার, ভেটেরিনারি সায়েন্স কিংবা এনিম্যাল সায়েন্স পড়ছেন (ন্যূনতম ১ বছর কোর্স শেষ করেছেন) কিংবা ইতোমধ্যে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন? আপনার বয়স কি ১৮-৩০ বছরের মধ্যে। আইইএলটিএস স্কোর ন্যূনতম ৪.০ আছে। তবে জার্মান, সুইডেন বা নরওয়ের জন্য আইইএলটিএস স্কোর প্রয়োজন নেই। ন্যূনতম উচ্চতা ১৬৫ সেন্টিমিটার (ডেইরি ফার্ম এবং মিল্কিং ফার্মে কাজ করার জন্য)। এগুলো যদি পূরণ করতে সমর্থ হন, তাহলে জব ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
স্টেপ ২: সব শিক্ষাগত যোগ্যতার অরিজিনাল এবং সার্টিফায়েড কপি, পাসপোর্ট কপি, বিস্তারিত সিভিসহ আবেদন ফি দিয়ে আবেদন করুন।
স্টেপ ৩: ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে আজই নিয়ে নিন।
স্টেপ ৪: সিভি এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ঠিক থাকলে দুই সপ্তাহের মধ্যে জব কন্টাক্ট রেডি হওয়ার কথা।
স্টেপ ৫: ভিসার জন্য কেইস আইডি তৈরি, ভিসা ফি প্রদান।
স্টেপ ৬: ২ মাসের মধ্যে ভিসা বা রেসিডেন্স কার্ড প্রাপ্তি এবং ফি পরিশোধ।
স্টেপ ৭: কাজের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ, নির্দিষ্ট দেশে হাউজিংয়ের ব্যবস্থা, সোশ্যাল রেজিস্ট্রেশনে সহায়তা।

ফি পরিশোধ: আবেদনকারীকে বাংলাদেশি টাকায় সর্বোচ্চ ১২০০ ইউরো বা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ফি পরিশোধ করতে হবে। যার মধ্যে জব লেটার হাতে পাওয়ার পর প্রায় ৩০০-৪০০ ইউরো পরিশোধ করতে হতে পারে। বাকি ফি ভিসা হাতে পাওয়ার পর পরিশোধ করার কথা। ন্যূনতম ফি যেভাবেই পরিশোধ করা হোক না কেন, একজন আবেদনকারী এ নিয়ে সরাসরি যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান করে নিতে পারবেন।

আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের কোনো এজেন্ট বা দালাল চক্র যাতে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে বেশি টাকা হাতিয়ে নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে গ্লোবাল এডুকেশন ডেনমার্ক বাংলাদেশে সরাসরি কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

লেখক: কোপেনহেগেন প্রবাসী, ডেনমার্ক।

Ads
আপনি এটাও পছন্দ করতে পারেন
Loading...