অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি

Ads

অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি:আমাদের জাতীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি এবং খাদ্য, আমিষ ও পুষ্টি চাহিদার অন্যতম কৃষি খাতের প্রতি সরকারের অরো উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে সহায়তার হাত বাড়ানো খুবই জরুরি। ২০১৮ সালকে স্বাগত জানিয়ে বাংলার কৃষকদের অসীম অবদানের প্রতি অবনত শ্রদ্ধায় নিবেদিত আজকের লেখাটি।

কৃষি বলতে এখন আর শুধু ধান আর পাট উৎপাদন নয়। কৃষি সবচেয়ে সম্প্রসারিত ক্ষেত্র, যা একদিকে অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্যশস্যের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আনছে, অন্যদিকে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথকে সুগম করেছে। বাংলাদেশে কৃষির আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে— একমাত্র কৃষিক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম পুঁজিতে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এসব বহুমুখী উৎপাদনশীল কৃষি খামারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে অনেক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, খাদ্যপণ্য এবং কৃষিজ উৎপাদন সহায়ক উপকরণের ছোট-বড় ব্যবসা। অল্প কথায় বলা মুশকিল, কারণ কৃষিক্ষেত্রটি জাতীয় উন্নয়নে বহুমুখী কর্মক্ষেত্রের বৃহৎ সমাবেশ ঘটিয়ে কৃষি থেকে কৃষি শিল্পের দিকে সম্প্রসারণ হচ্ছে। কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত বিকাশের প্রতি বাংলাদেশ বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। ফুল, ফল, সবজি ও অন্যান্য ফসল, মাছ, মুরগি, দুধ ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে পৃথক শিল্প খাত। এছাড়া বাঁশ, বেত, ঝিনুকসহ রকমারি কৃষিজ উপকরণের সমন্বয়েও জেগে উঠছে কৃষিভিত্তিক শিল্প সম্ভাবনা।

এর মধ্যে গর্ব করার মতো অন্যতম একটি শিল্প শীতল পাটি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় বাংলাদেশের নামটি লিপিবদ্ধ করেছে। কৃষিভিত্তিক শিল্পের মধ্যে রয়েছে পোলট্রি ফার্ম, ডেইরি ফার্ম, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, মত্স্য হিমায়িতকরণ ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্প। কৃষিজ শিল্প খাতের মধ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প অন্যতম এবং সম্ভাবনাময় খাত। আমরা জানি, প্রকৃতিগতভাবেই আমাদের খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প বহুমুখী একটি ক্ষেত্র। দেশে প্রায় ৭০০ প্রক্রিয়াকরণ খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

কৃষি খাতে আমাদের অকল্পনীয় উন্নতি সাধন হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির আনুপাতিক অবদান কমলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির দ্রুতগতির সঙ্গে সীমিত ও সংকুচিত হয়ে আসা জমি নিয়েও মোট কৃষি উৎপাদন বাড়ছে। কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি, বীজ, সার ও যন্ত্রের ব্যবহার উৎপাদন বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ। তার সঙ্গে বিশেষ অবদান রয়েছে আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের। যারা অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিবিষ্ট গবেষণায় উচ্চফলনশীল, কম সময়ে ঘরে তোলা যায় এমন জাত ও পরিবেশসহিষ্ণু নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন।

ধান-পাটের পাশাপাশি খাদ্যশস্য, শাকসবজি, রকমারি ফল, সমুদ্র ও মিঠা পানির মাছ, গবাদি পশু, পোলট্রি মাংস ও ডিম, উন্নত জাতের হাঁস-মুরগি, দুগ্ধ উৎপাদন অনেক বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ব উৎপাদন তালিকায় শীর্ষত্বের লড়াই করছে বাংলাদেশের কৃষি। কাজেই কৃষি এখন সামগ্রিক অগ্রগতির নাম। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ এবং শ্রমশক্তির ৬০ শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত।

কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বাংলাদেশ চাল রফতানিকারক দেশ হিসেবে সুখ্যাতি পাচ্ছে। দেশের ৫৫ শতাংশ চাল আসে বোরো থেকে। বোরো ফসলের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। স্বাধীনতার ৪৬ বছরে প্রায় ২০ শতাংশ চাষের জমি কমলেও চাল উৎপাদন বেড়েছে চার গুণ। আমাদের দেশের বহু কৃষিজ ফসল ও পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক সমাদৃত। আমাদের অচেনা-অজানায় নাগামরিচ, হবিগঞ্জের লেবু, কচুর লতি ইত্যাদি বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়।

সরকার শস্যভিত্তিক শিল্প স্থাপনের সুবিধা দিলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহুমাত্রিক কৃষিজ শিল্পের সমাবেশ ঘটবে। ফলে স্থানীয় জনশক্তির ব্যাপক কর্মসংস্থান হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদিত ফসল নষ্ট হওয়ার হার কমবে।

Ads
আপনি এটাও পছন্দ করতে পারেন
Loading...