নতুন বার্তা হিসেবে তিনি দেখতে চেয়েছেন প্রতিটি সকালকে -শাইখ সিরাজ

Ads

পৃথিবীব্যাপী বাংলার মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, তার কথা শুনবে। এখন অন্য জাতিগোষ্ঠির কোনো কোনো মানুষও অপেক্ষায় থাকেন। তিনি কী বলেন তা শোনার জন্য। কোনো প্রতিশ্রুতির কথা নয়। কোনো সান্ত্বনার বাণী নয়। কারো ওকালতি নয়। কারো বিরুদ্ধাচরণ নয়। কাউকে ধরিয়ে দেয়া নয়। কারোর শংসা বা স্তুতিও নয়। শতভাগ নরম, স্বাভাবিক ও সমান্তরাল উচ্চারণ।

মানুষের ক্ষুধা থাকে। বহুমুখী ক্ষুধার অভিযানে নিয়ত দৌড়ের ওপর থাকে মানুষ। ক্ষুধা পূরণ হলে আরও ক্ষুধা বাড়ে। খাদ্য বাড়ে ক্ষুধা বাড়ে। একদিন খাদ্যের পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে ক্ষুদ্র মানুষ। লোভের পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে ক্ষুদ্র মানুষ। চেয়ারকে লক্ষ্য করে দাঁড়িয়ে থাকে ক্ষুদ্র মানুষ। অনেক কিছু চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয় মানুষ।

তিনি কিছু হতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন কিছু করে যেতে। একটি কাজ করে যেতে নিষ্ঠার সঙ্গে। খুব সহজেও কাজটি হয়তো করা যায়। তিনি চেয়েছেন গভীর ভালোবাসার সঙ্গে কাজটি করতে। জীবনঘনিষ্ঠ শিল্পকর্মে ফাঁকিঝুকি থাকে না। সংক্ষিপ্ত পথ থাকে না। যত্ন করে মনের কোমল জায়গাটি দিয়ে তুলি ধরলে রংটি উপযুক্ত ধারায় বসে। অন্য কোনোভাবে আর হয় না। তিনি কাজটি করে যেতে চেয়েছেন জীবনভর। করে যাচ্ছেন। এখানে তার ক্ষুধা পূরণের কিছু নেই। ভাড়ার পূর্ণ করার কিছু নেই। এখানে তার তৃপ্তির ঢেকুর তোলার কিছু নেই। পথই একদিন পথ রচনা করে। পথই দেখিয়ে দেয় সুদীর্ঘ পথের নকশা। কোথাও কোনও মাইলস্টোন দেখা যায় না। থাকে হয়তো। মানুষের গভীর চিন্তায়, প্রত্যাশায়, স্বস্তিতে, ভালোবাসায়।

পৃথিবীর উপরিভাগে সবাই হাঁটছি। নিজের জন্য হাঁটছি। নিজের মতো করে হাঁটছি। খুব কম মানুষ হাঁটছে কারোর জীবন সাধনার ভেতর দিয়ে। তাদের পা বেশ গভীরে। মৃত্তিকা তাকে দেয় গভীর ভালোবাসায় শেকড় আর প্রাণশক্তি বিস্তারের অদম্য সুযোগ।

নোয়াখালী সূবর্ণচরের বৃদ্ধ আসমান আলীর তিনদিন খাননি, কে তাকাবে তার দিকে? ঝিনাইদহের সাধুহাটি আহসাননগরের হরিপদ এক গোছা ধান ফলিয়ে পৃথিবীকে কী জানাতে চেয়েছিল? হার্ডিঞ্জ সেতু পার হয়ে ঈশ্বরদীর বিস্তীর্ণ মাঠ কেন বলেছিল, এখানে জয়ী হবে ফল ফসলের অদ্ভুত আহ্বান? রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মাহফুজ কীভাবে ভেবেছিলেন হড়হড়ে শুকনো মাটিতে পুকুর কেটে ফলানো যাবে লাখ লাখ টাকার মাছ? টাঙ্গাইলের মীর্জা লিপি কেন জীবন সঙ্গী করলো ব্যাঙের ছাতাকে? একে একে শত সহস্র অযুত নিযুত হয়েছে গল্প। তারের খাঁচায় ঝুলতে থাকা এক হালি ডিমের সেই রুক্ষ ক্ষুধার্ত সময় পেরিয়েছে বহু আগে। ডিম পরিবহনে সড়ক পার হয় ট্রাকের সারি। মানুষ ভাত-মাছ-মাংস-শাক-ফল খায় পেটপুরে। গল্পে গল্পে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে মাছ চাষীর দেশ। দেখতে দেখতে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে সবজি চাষীর দেশ। হাসতে হাসতে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে মুরগী খামারেরর দেশ। কল্মি শাকের পুঁজি দিয়েও একজন ইমান আলীর ছেলে লেখাপড়া শেষ করে ফেলে।

টুকরো টুকরো জমিতে টুকরো টুকরো স্বপ্ন। ধনী হতে চায় না স্বপ্নচারীরা। চায় উৎপাদন করতে। অদ্ভুত নেশার মধ্যে ডুবে যেতে। নাটোরের পেয়ারা আতিকের আর ঘুম আসে না। টাংগাইলের আম দেলোয়ারেরও কাটে বিনিদ্র সময়। সাতক্ষীরার সাইফুল গাজী চোখ বুজলেই দেখে খলবলিয়ে উঠছে লক্ষ কোটি রঙিন প্রাণ। হালাল সরকার জিদ করে জীবন কাটায় এক লাখ হাসের সঙ্গে। এপিজে আবুল কালাম বলেছেন, স্বপ্ন তা নয়, যা মানুষ ঘুমিয়ে দেখে। স্বপ্ন তা যা মানুষকে ঘুমোতে দেয় না। আতিক, দেলোয়ার, সাইফুল গাজীর মতো আরো হাজার হাজার মানুষ এখন ঘুমোয় না। তারা স্বপ্ন রচনায় ব্যস্ত থাকে।

ছাদে ছাদে সবজি, ছাদে ছাদে ফুল। বাঙালিরা পৃথিবী সবপ্রান্তে লাগাচ্ছে গাছ-গাছালি। এক মুঠ ধনেপাতার কি এমন ধক! বাঙালিরা এক মুঠো ধনে পাতায় আজ খুঁজে পায় সুগভীর দেশচেতনা। একটি ধানি মরিচের দেশগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যে বাঙালির ঘর জুড়ে। একেকটি সকাল অনন্য অসাধারণ হয়ে ওঠে। একেকটি সন্ধ্যা স্বপ্নের মতো সেজে ওঠে।

শাইখ সিরাজ কিছুই হতে চাননি। তিনি চেয়েছেন একটা কিছু করে যেতে। সারাটি জীবনভর। গভীর ভালোবাসা ও মমত্বে। প্রতিটি সকালকে তিনি দেখতে চেয়েছেন নতুন বার্তা হিসেবে। গভীর বিশ্বাসে তা তিনি দেখে চলেছেন।

জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা- আদিত্য শাহীন

Ads
আপনি এটাও পছন্দ করতে পারেন
Loading...