পুদিনা চাষ পদ্ধতি

Ads

পুদিনা একটি অত্যন্ত উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ। প্রায় ২০০০ বছর ধরে পুদিনার ভেষজ ব্যবহার হচ্ছে। এর সাধারণ ঔষধি ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন আন্ত্রিক জটিলতায় যেমনঃ বদহজমে। দেহের ফ্যাট/চর্বিকে সহজে ভাঙ্গতে পারে বলে এটা একদিকে যেমন হজমে সহায়তা করে, অন্যদিকে মেদ/স্থুলতা কমাতেও সহায়তা করে।

প্রায় ৬৫০ জাতের পুদিনা পাওয়া যায় যাদের অধিকাংশই প্যারিনিয়েল এবং কতিপয় একবর্ষজীবি। বিশ্বব্যাপি পিপারমিন্ট, স্পিয়ারমিন্ট ও আর্বেনেসিস জাতের পুদিনা বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে জাপানিজ অরিজিন আর্বেনেসিস হল কমন। বাংলাদেশ, ভারত এবং ইউরোপ, আফ্রিকা ও অষ্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে আগাছার মত জন্মাতে দেখা যায়। সুগন্ধি রন্ধনকার্যে ও ভেষজ ঔষধ তৈরিতে এর রয়েছে ব্যাপক ব্যবহার।

গাছের বর্ণনা
পুদিনার ব্যাপক বিস্তৃত ভূগর্ভস্থ রাইজোম থাকে ও কান্ড শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। পাতা গাঢ় সবুজ অথবা কতিপয় ক্ষেত্রে ধুসর সবুজ বা ফ্যাকাশে হলুদ হয়। পাতার প্রন্তভাগ করাতের ন্যায় কাঁটা কাঁটা ও পরস্পর বিপরীতে জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে। খাড়া পুস্পদন্ডে সাদা বা পার্পেল বর্ণের ফুল গুচ্ছাকারে আসে। চারটি অসমান লুব সহ ফুলের দল দ্বিখন্ডিত। ফল ছোট ক্যাপসিউলের মত যা ৪ টি বীজ ধারণ করে। জাতভেদে লম্বায় ১০-৩০ ইঞ্চি হয় এবং অনির্দিষ্ট স্থান ব্যাপিয়া বিস্তৃতি লাভ করে। দ্রুতবর্ধনশীল এ গাছ ভূ-পৃষ্ঠে একটি রাণারের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। অনিয়ন্ত্রিত স্থান ব্যাপিয়া বিস্তৃতির কারণে এটাকে Invasive অর্থাৎ আক্রমণাত্নক হিসাবে গণ্য করা হয়।

চাষাবাদ
বিভিন্ন ধরণের আবহাওয়ায় বিভিন্ন ধরণের পুদিনার সহনশীলতা রয়েছে। সাধারণত আর্দ্র আবহাওয়া ও আর্দ্র মাটিতে ভাল জন্মে। হালকা শেডের নীচে ভাল হলেও পূর্ণ রোদ্রেও জন্মাতে পারে। এর ইনভাসিভনেস মোকাবেলা করে নিয়ন্ত্রিত স্থানে চাষ করার ক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠের মাটিতে বসানো তলাহীন কোন পত্রে বা ভুপৃষ্ঠের উপরে কোন টব বা ব্যারেলে চাষ করা যেতে পারে। স্বাস্থ্যবান পুদিনা গাছের রাণার হতে কাটিং নিয়ে রোপণ করা বেশ কার্যকর। চাষাবাদের জন্য পুদিনার সবচেয়ে কমন ও জনপ্রিয় জাতসমূহ হচ্ছে পিপারমিন্ট, স্পিয়ারমিন্ট ও অ্যাপেলমিন্ট। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বোণা বা লাগানো হয় এবং মার্চে সংগ্রহ করা হয়।

বিদ্যমান উপাদান ও ব্যবহার
জাতভেদে মিন্ট অয়েল হতে ৪০-৯০% মেন্থল পাওয়া য়ায়। যেমনঃ Mentha Piperita তে যেখানে প্রায় ৪৮% মেন্থল পাওয়া যায় সেখানে Mentha arvensis তে প্রায় ৯০% মেন্থল পাওয়া যায়। তাছাড়া জাতভেদে রয়েছে আই-কার্বোন, মেন্থোন, টার্পেন, লিমোলেন, সিনোল ও পলেগোন ইত্যাদি।

আমাদের দেশে খাদ্য হিসাবে পুদিনার চাটনী ও ভর্তার বেশ কদর রয়েছে। রন্ধণে সতেজ বা শুষ্ক পাতা ব্যবহারযোগ্য। তবে সতেজ পাতাই অধিক গ্রহনযোগ্য। এটা চমৎকার মিষ্টি গন্ধময় ও খাওয়ার পর শীতল স্বাদ প্রদান করে। চা, পানীয়,জেলি, সিরাপ, ক্যান্ডি ও আইসক্রিমের সাথে ব্যবহার হয়। মধ্যপ্রাচ্যে মেষের মাংস রান্নায় পুদিনার পাতা প্রদান করা হয়; ইংল্যান্ডে মেষের মাংসের সাথে পুদিনার সস বেশ জনপ্রিয়। চায়ের সাথেও সেবন করা যায়;

যেমনঃ অ্যারাবিয়ান ও পূর্ব আফ্রিকার দেশসমুহে Touareg চায়ের একটি জনপ্রিয় উপাদান হল পুদিনা। জাতভেদে মিন্ট অয়েলে প্রাপ্ত মেন্থল হল অনেক কসমেটিক্স ও পারফিউমের প্রধান উপাদান। মেন্থল নামক উপাদানই মিন্ট তথা পুদিনাকে অ্যারোমেটিক বা সুগন্ধময় বৈশিষ্ট্য প্রদান করে। টুথপেস্ট, এন্টিসেপটিক মাউথ রেজিন, নিঃশ্বাস সজীবকারক এবং খাদ্যদ্রব্য যেমনঃ পানীয়, চুইংগাম, চকলেট ও ক্যান্ডিতে মিন্ট-ফ্লেভারিং হিসাবে যে জিনিসটি ব্যবহার হয় তা হল মেন্থল-স্যালিসাইলেট; যাকে ‘অয়েল অব উইন্টারগ্রীণ’ বলা হয়। এডিটিভ হিসাবে সিগারেটে ব্যবহৃত মেন্থল তামাকের তিক্ত স্বাদ দুর করে ও গলায় স্বস্তি প্রদান করে।

পুদিনার নির্যাস পরিবেশ-বান্ধব কীটনাশক হিসাবে মশা, পিঁপড়া ইত্যাদি কীট তাড়ায় আবার উপকারী পোকা আকর্ষণ করতে পারে। তাই এটা অন্য গাছ জন্মাতেসাথী গাছ হিসাবে রাখা যায়। সাদামাছি ও অ্যাফিডের প্রতি সংবেদনশীল।

Ads
আপনি এটাও পছন্দ করতে পারেন
Loading...