মাল্টা’র চাষ পদ্ধতি ও সার ব্যবস্থাপনা

Ads

খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ও সম্ভাবনাময় একটি ফল মাল্টা। শিশু হতে বৃদ্ধ সবাই কমবেশি মাল্টা খেতে পছন্দ করে মাল্টা মূলত আমাদের দেশী ফল না হলেও খুব সম্প্রতি আমাদের দেশে অনেকে ছোট পরিসরে মাল্টা চাষ করছেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কতৃক উদ্ভাবিত বারি মাল্টা-১ আমাদের দেশের মাটিতে চাষের জন্য খুবই সম্ভাবনাময়।

বারি মাল্টা-১ চেনার উপায়ঃ বারি মাল্ট-১ এর মাথার দিকে গোলাকার একটা দাগ থাকে, ঠিক যেন কেউ ১ টাকার কয়েন দিয়ে সেখানে চাপ দিয়েছে।

মাল্টা চাষের জন্য জমি নির্বাচন: উঁচু এবং সব সময় রোদ পড়ে এমন জমি মাল্টা চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে অর্থাৎ জমির পানি সহজেই নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মাল্টা চাষের জন্য নির্বাচিত জমি সমতল হতে হবে, তা না হলে মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। জমিতে আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং আসপাসের ছায়া দানকারি উঁচু গাছের ডালপালা কেটে দিতে হবে।

রোপন পদ্ধতি: মে থেকে অগাষ্ট মাস মাল্টা গাছের চারা/কলম লাগানোর উত্তম সময়। তবে বছরের অন্যান্য সময়ে পানি সেচের ব্যাবস্থা করা গেলে যে কোন সময় মাল্টার চারা/ কলম লাগানো যাবে। চারা রোপনের জন্য ৭৫ সেমি দৈঘ্যে, ৭৫ সেমি’র প্রস্থ এবং ৭৫ সেমি গভীরতার ৩-৪ মিটার দূরত্বে গর্ত করে নিতে হবে।
গর্ত করার পর, জৈব সার ১৫ কেজি, ছাই ৪-৫ কেজি, টিএসপি সার ২৫০ গ্রাম, এমওপি সার ২৫০ গ্রাম এবং চুন ২৫০ গ্রাম গর্তের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ১৫-২০ দিন মাটি দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে। ১৫ দিন পর গর্তের মাটি আবার কোদাল দিয়ে আলগা করে সংগ্রহীত চারা গর্তে রোপন করতে হবে।
চারা রোপনের পর প্রয়োজন মত পানি দিতে হবে এবং শক্ত খুঁটি গেড়ে তার সাথে বেঁধে দিতে হবে। যাতে করে সদ্যরোপনকৃত চারা বাতাসে হেলে না পড়ে।

মাল্টা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি: মাল্টার চারা রোপনের পর প্রতি বছর নিয়ম করে তিন বার গাছের গোড়ায় সার দিতে হবে।

প্রথমবার: মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য চৈত্র মাসের মধ্যে(মার্চ মাসে)।
দ্বিতীয়বার: বর্ষার আগে মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য জ্যৈষ্ঠ মাসে (মে মাসে)।
তৃতীয়বার: বর্ষার পরে মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য আশ্বিনে (সেপ্টেম্বর মাসে)।
বছরে মোট এই তিনবারে সার প্রয়োগ করতে হবে, তবে সেচের ব্যবস্থা না থাকেল কেবল প্রথম ও শেষ মোট দুই বারে সার প্রয়োগ করাটাই উত্তম।

গাছের বয়স অনুসারে সারের মাত্রাঃ গাছের বয়স ভেদে সারের মাত্রাও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। নিন্মে তা দেয়া হলো-

১-২ বছর বয়সে: জৈব সার ১০ কেজি, ইউরিয়া ২৫০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, এমওপি ১৫০ গ্রাম, জিংক অক্সাইড ১০ গ্রাম এবং বরিক এসিড ৫ গ্রাম।
৩-৪ বছর বয়সে: জৈব সার ১৫ কেজি, ইউরিয়া ৩৫০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম, এমওপি ২৫০ গ্রাম, জিংক অক্সাইড ১৫ গ্রাম এবং বরিক এসিড ৮ গ্রাম।
৫-৭ বছর বয়সে: জৈব সার ১৫ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ২৫০ গ্রাম, এমওপি ২৫০ গ্রাম, জিংক অক্সাইড ২০ গ্রাম এবং বরিক এসিড ১০ গ্রাম।
৮-১০ বছর বয়সে: জৈব সার ২০ কেজি, ইউরিয়া ৬০০ গ্রাম, টিএসপি ৩৫০ গ্রাম, এমওপি ২৫০ গ্রাম, জিংক অক্সাইড ২৫ গ্রাম এবং বরিক এসিড ১২ গ্রাম।

১০ বছর বা তার অধিক বয়সে: জৈব সার ২৫ কেজি, ইউরিয়া ৭৫০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ৫০০ গ্রাম, জিংক অক্সাইড ৩০ গ্রাম এবং বরিক এসিড ১৫ গ্রাম।

বাজার মূল্য: মাল্টার কলমের মূল্য প্রতি পিস ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে।
আমাদের দেশে উৎপাদিত মাল্টা কৃষক ক্ষেতেই বিক্রি করছেন ১৪০-১৪৫ টাকায়।

Ads
আপনি এটাও পছন্দ করতে পারেন
Loading...