যমজ বাছুর জন্ম দেবে গাভি

Ads

নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত সূচনা হয় ২০১৪ সালে ভারত সরকার গরু আসা বন্ধ করায় সৃষ্ট সংকট থেকে।গরু উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ বাজারে মাংসের চাহিদা মেটাতে ব্যাপক হারে বেড়ে যায় গবাদিপশুর লালন-পালন। এবার এই খাতে আরও বড় সম্ভাবনার হাতছানি। ভ্রূণ স্থাপন প্রযুক্তির মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে গাভির প্রজননক্ষমতা। এই পদ্ধতিতে একটি গাভি থেকে এক মৌসুমে একটির বদলে দুটি বাছুর জন্ম নেবে। এই প্রযুক্তিতে সাফল্য দেখিয়েছেন প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। ইনভিট্রো অ্যামব্রায়ো প্রডাকশন বা আইভিপি প্রযুক্তিটি শিগগিরই মাঠপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আশা করছেন তারা।

প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট সাভারে অবস্থিত। ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গৌতম কুমার দেব বলেন, বাংলাদেশে এ প্রযুক্তি নতুন। দুই বছর আগে আইভিপি প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি গাভি থেকে দুটি বাছুর জন্মানোয় সফল হন গবেষকরা। এরপর গত বছর আরও একটি গাভি থেকে জোড়া বাছুরের জন্ম দেওয়া হয়। প্রাথমিক সাফল্যের পর আমরা জোড়া বাছুর জন্মানোর প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি। আগামী বছরের প্রথম দিকে কয়েকজন খামারির মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে যাব। মাঠপর্যায়ে ভ্রূণ স্থাপনে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জামের স্বল্পতা ছিল, তবে এখন তাও কিছুটা কাটিয়ে ওঠা গেছে। সফল হলে এই প্রযুক্তি গরু সম্পদের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাবে।

ড. গৌতম কুমার দেব বলেন, প্রাথমিকভাবে সফল হওয়ায় আমরা এখন ভালো মানের পশু বাছাই করছি এবং তাদের শরীর থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হবে। ইনস্টিটিউটের নিজস্ব তহবিল থেকে গবেষণার খরচ মেটানো হচ্ছে। চার বছরের টানা গবেষণার ফলে তারা এ সাফল্য অর্জন করেছেন।

এই প্রযুক্তি সম্পর্কে ইনস্টিটিউট থেকে জানা যায়, ইনভিট্রো অ্যামব্রায়ো প্রডাকশন বা আইভিপি প্রযুক্তির মাধ্যমে দুধেল গাই বা উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের গাভি থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে নেওয়া হয়। সেই ডিম্বাণু ল্যাবে পরিপক্ক, নিষিক্তকরণ এবং কালচার শেষে তা ভ্রূণে পরিণত করা হয়। সাত দিন ল্যাবে থাকার পর অপেক্ষাকৃত দুর্বল বা দুধ কম দেয়, এমন গাভির জরায়ুতে তা স্থাপন করা হয়। এভাবে নির্ধারিত সময়ে ভ্রূণ বেড়ে ওঠে। ১০ মাসের আগে-পরে সেই গাভি থেকে দুটি বাছুর পাওয়া যায়। একটি সুস্থ ও ভালো মানের গাভির ডিম্বাণু দিয়ে অনেকগুলো গাভির গর্ভধারণ করানো সম্ভব হবে। আইভিপি প্রযুক্তিতে জন্মানো বাছুর বর্তমানে পরিণত বয়সে পৌঁছেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এদের এখন বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময় চলে এসেছে। তবে এদের মধ্যে ভ্রূণ স্থাপন করা হয়নি।

বাংলাদেশে গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন নতুন কিছু নয়। কৃত্রিম প্রজননে গরুর বাছুর উৎপাদন দিন দিন আরও আশার আলো ছড়াচ্ছে। ১৯৭৬ সালে নেওয়া এই কার্যক্রম দেশে গরুর চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি অবদান রাখছে গবাদিপশু পালনেও। সাধারণত ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট কয়েকটি পদ্ধতির মাধ্যমে গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করাকে কৃত্রিম প্রজনন বলে। শুরুর বছরে কৃত্রিম প্রজননে দেশজুড়ে ২৬ হাজার বাছুর উৎপাদন হলেও চার দশকেরও বেশি সময় পরে এসে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখে। কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে উন্নত জাতের ষাঁড়ের শুক্রাণু ব্যবহার করে সুস্থ গাভির মাধ্যমে প্রজনন করে বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। দেশের গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার’ জাতীয় গো-প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে এ কার্যক্রম চালাচ্ছে। সাভারে ৭৯২ দশমিক ৮৭ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে এ খামার।

মূল সিমেন সরবরাহ হয় সাভারের কেন্দ্রীয় কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার থেকে। অন্য যে ২১টি জেলায় কেন্দ্র আছে সেখানকার চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট আছে। আগামীতে ৬০ জেলায় সিমেন সরবরাহের কেন্দ্র করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

Ads
আপনি এটাও পছন্দ করতে পারেন
Loading...