অনেকটা ছোট সাইজের আপেলের মতো দেখতে কাশ্মীরি আপেল কুল। আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল রং। অধিক পুষ্টিগুন ও সুস্বাধু। বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা আছে। আর নিরাপদ ও বিষমুক্ত কাশ্মীরি আপেল কুল চাষ করে প্রথম বছরেই ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে ফরিদপুরের শিক্ষিত বেকার যুবক মফিজুর রহমান।
মফিজুর রহমান ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গবিন্দপুর গ্রামের আক্কাস আলী সরদারের এর পুত্র। পড়া-লেখা শেষ করে চাকুরি না-পেয়ে, জীবন জীবিকার প্রয়োজনে বৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রয় করে বিদেশে পাড়ি জমায়। দীর্ঘ পাঁচ বছর বিদেশে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও তেমন সুবিধা করতে না পেরে ফিরে আসেন দেশে। দেশে এসে কোন কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে ঘুরে বেড়ান। ঠিক তখনই পরিচয় ঘটে ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন এর সাথে। তার পরামর্শ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে ১৮শ ৬০টি কাশ্মীরি আপেল কুলের চারা পৈত্রিক সম্পতিতে রোপন করেন বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহে। চারা রোপনের ৭মাস পরেই ফুল আসে প্রতিটি গাছে।
বর্তমানে বাগানের প্রতিটি গাছে আপেল কুল ঝুলছে। কুলের গায়ে রং আসতে শুরু হরেছে। দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে পুরো বাগানটি। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা কাশ্মীরি আপেল কুল বাগান দেখতে আসছে। অনেকেই নতুন নতুন বাগান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
কাশ্মীরি আপেল কুল চাষি মফিজুর রহমান বলেন, জীবিকার প্রয়োজনে পাঁচ বছর বিদেশে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেও সফল হতে পারিনি। দেশে ফিরে কিছুদিন বেকার ছিলাম, এরই মধ্যে পরিচয় হয় ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন স্যারের সাথে তার পরামর্শে চুয়াডাঙ্গা গিয়ে কুলের চারা কিনে এসে পৈত্রিক সম্পতিতে রোচন করি। সবমিলিয়ে কুল বাজারে তোলা পর্যন্ত আমার খরচ হবে ৪লাখ থেকে সাড়ে ৪লাখ টাকা। বাগানে ফলন খুবই ভাল হয়েছে। সামনে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসলে, আশা করছি ১৮ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা কুল বিক্রয় করতে পারব। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে আমি আগামিতে আরো বেশী জমিতে ফলের চাষ করতে পারব এবং দেশের মানুকে নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফল খাওয়াতে পারব।
এদিকে মফিজুর রহমান এর বাগান পরিদর্শন করেছেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর পরিচালক ফিল্ড সার্ভিস ইউং কৃষিবিদ চন্ডি দাস কুন্ডু। এসময় তার সাথে ছিলেন, ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তীসহ ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগন।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, মফিজুর রহমান এর পাশে আমরা সবসময় আছি। তিনি কাশ্মীরি আপেল কুল চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তিনি সরকারি সহযোগিতা পেলে আরো বাল করতে পারবে। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর পরিচালক ফিল্ড সার্ভিস ইউং কৃষিবিদ চন্ডি দাস কুন্ডু বলেন, মফিজুর রহমান বিদেশ থেকে ফিরে এসেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করে কুলের চাষ করেছে। আমরা সবসময় তার পাশে থেকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি।