কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি বলেন, দেশে অর্থকরী ফসল মাশরুম চাষের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ হচ্ছে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এবং ভূমিহীন। তাঁদেরকে মাশরুম চাষে সম্পৃক্ত করতে পারলে কর্মসংস্থান ও আয়ের পথ তৈরি হবে। মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করতে পারলে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। অন্যদিকে, দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার যুবক রয়েছে যারা চাকরির জন্য চেষ্টা করছে। তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা করতে পারলে মাশরুমের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি হবে।
কৃষিমন্ত্রী মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে অনলাইনে মাশরুম চাষী ও উদ্যোক্তাদের সাথে ‘মাশরুম চাষের সমস্যা, সম্ভাবনা ও সমাধান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।মাশরুম চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে শীঘ্রই উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মাশরুমের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে গবেষণা বাড়াতে হবে। গবেষণা করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও সিজনভিত্তিক নতুন জাতের মাশরুম উদ্ভাবন করতে হবে এবং চাষ সম্প্রসারণ করতে হবে। সেজন্য মাশরুম বিষয়ে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের আমরা কাজে লাগাব। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটকে শক্তিশালী করব। শীঘ্রই প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে আমরা দেশের হর্টিকালচার সেন্টার, মাশরুম সেন্টার প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করব যাতে করে তারা নতুন জাত উদ্ভাবন করতে পারে। কর্মকর্তা, চাষী এবং উদ্যোক্তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
দেশে বর্তমানে প্রায় ৪০,০০০ মেট্রিক টন মাশরুম প্রতি বছর উৎপাদন হচ্ছে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণন সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে, বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ প্রায় সব দেশেই মাশরুম আমদানি করে থাকে । বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাশরুম রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম এবং অতিরিক্তি সচিব (সম্প্রসারণ) মো: হাসানুজ্জামান কল্লোল এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সভাটি সঞ্চালনা করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আব্দুল মুঈদ। এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সারাদেশ থেকে মাশরুম চাষী ও উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিরা অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন।
‘বাংলাদেশে মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয়তা, সুযোগ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক নিরদ চন্দ্র সরকার। প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাশরুম একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফসল। একদিকে, মাশরুম একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার, অন্যদিকে তা চাষ করার জন্য কোন আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না। ঘনবসতিপূর্ণ ও দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার বাংলাদেশে খাবারের চাহিদা বাড়ছে অথচ খাবার যোগান দেয়ার জমি প্রতিবছর কমছে। এই অবস্থায়, অনুৎপাদনশীল ফেলনা জমির স্বল্প পরিমাণ ব্যবহার করেই বিপুল পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া, বাংলাদেশের আবহাওয়া সারাবছর মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী। দেশে মাশরুম চাষের উৎপাদন মাধ্যমের (যেমন খড়) পর্যাপ্ততা রয়েছে। মাশরুম চাষ পরিবেশবান্ধব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহনশীল।
দারিদ্র্যবিমোচনে এবং নারী, শিশু, অক্ষম ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠির পুষ্টিচাহিদা পূরণেও মাশরুম বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। মাশরুম চাষ শুরু করার জন্য অধিক পুঁজির প্রয়োজন হয় না বিধায় হতদরিদ্র ভূমিহীন মানুষও মাশরুম চাষ করতে পারেন। মাশরুম চাষে অল্প দিনেই ফলন পাওয়া যায় এবং লাভসহ পুঁজি ঘরে আসে। অন্যদিকে, মাশরুম একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার হওয়ায় সহজেই পুষ্টিচাহিদা পূরণ করা সম্ভব। মাশরুম চাষের মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থানও হতে পারে।