২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,বর্ষাকাল
E-krishi-logo

প্রচ্ছদ > লিচুতে করোনার থাবা, বিক্রি নিয়ে হতাশ চাষিরা

লিচুতে করোনার থাবা, বিক্রি নিয়ে হতাশ চাষিরা

মহামারি প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে লিচুর রাজধানী খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে। মাথায় হাত পড়েছে লিচু চাষির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের। ইতোমধ্যে আঁটির লিচু বাজারে এসেছে। আর সপ্তাহ খানেক পরেই বোম্বাই লিচু ভাঙা শুরু হবে। গতবারের চেয়ে এবারে ফলন ভালো হলেও করোনা প্রভাবে মোকামগুলোতে নেই কোন কর্মযজ্ঞ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবারই লিচু ভাঙার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকার ব্যবসায়ীরা বাগানে বায়না করে যান। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। বায়না করতে তো আসেননি। কেউ বা বায়না করে আবার টাকা ফেরত নিয়ে গেছেন। এ এলাকার বাণিজ্যিক ভিত্তিক লিচু উৎপাদনকারী সহস্রাধিক চাষি ও ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা। কার কাছে লিচু বিক্রি করবেন, সে হিসেব মেলাতে পারছেন না। এবারে দেখা দিয়েছে কোটি কোটি টাকা লোকসানের সম্ভাবনা। এদিকে পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আব্দুল লতিফ জানালেন, ইতোমধ্যে মন্ত্রী, এমপিসহ ঊর্ধ্বর্তন কর্তকর্তাদের সঙ্গে কথা চলছে। কিভাবে এই পরিস্থিতিতে চাষি ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা যায়।

লিচু বাগান মালিকরা জানান, বিগত বছরগুলোর তুলনায় ফলন ভালো হলেও এবার ক্রেতা নেই। লিচুর ফুল আসা শুরুর পর অনেক বাগান কেনাবেচা হয়েছে। তবে করোনার কারণে লকডাউন শুরুর পর লিচু বিক্রির অনিশ্চয়তা থেকে বাগান দিয়ে আগাম টাকা ফেরত নিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। বাগান ফেরত পেয়ে বিপাকে পড়েছেন মালিকরা। বাগান আগাম নেওয়া ব্যবসায়ীরাই লিচুর বাজারজাতকরণ সম্পর্কে ভালো জানেন। তাই বিপুল পরিমাণ লিচু বিক্রি নিয়ে মালিকদের বেগ পেতে হবে। এছাড়া প্রত্যেক চাষি এবার লিচুর কাঙ্ক্ষিত দাম ও বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় আছেন।

উপজেলার চাঁদপুর চরের লিচু চাষি আলম হোসেম জানান, ‘প্রায় ১০ বিঘার ৮টা বাগান ইজারা নিয়েছি। সেখানে ১০০টির মতো লিচু গাছ রয়েছে। বাগান প্রতি ইজারা ব্যয় ও কীটনাশকসহ আনুষাঙ্গিক ব্যয় বাবদ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও ফলন ভালো। এরইমধ্যে কিছু গাছে লিচু পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু এবার ঢাকার পাইকাররা আসবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’

সলিমপুরের লিচু ব্যবসায়ী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের লিচুর বাজার রাজধানী ঢাকা সহ অন্যান্য জেলার ক্রেতা নির্ভর। করোনার কারণে অন্য জেলা থেকে মহাজন, ব্যাপারী ও ফড়িয়ারা এবার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। তাই আমরাও বাগান নেওয়া বা চাষিদের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে আসতে পারছি না। এবার প্রায় বাগানেই ফলন ভালো হওয়ায় ন্যায্যমূল্য নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।’

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এখানে তিন হাজার দুইশ হেক্টর জমিতে লিচুর বাণিজ্যিক বাগান রয়েছে। গাছের সংখ্যা তিন লাখের ওপর। এর মধ্যে দুই লাখ গাছের বয়স ১৫ বছরের বেশি। এ ছাড়া সারা উপজেলাতেই বসতবাড়ির আশপাশেও রয়েছে প্রচুর লিচুগাছ। লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের হিসাবে বড় গাছগুলোতে এবার নিম্নে ১০ হাজার, ঊর্ধ্বে ২৫ হাজার পর্যন্ত লিচু ধরেছে। অপেক্ষাকৃত ছোট গাছে লিচু এসেছে তিন থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত। বড় গাছে গড়ে ১০ হাজার ও ছোট গাছে ৩ হাজার করে ধরলে এবার লিচুর সংখ্যা প্রায় ২৩০ কোটি। পাইকারিতে গড়ে প্রতি লিচুর দাম দেড় টাকা ধরা হলেও দাম হয় ৩৪৫ কোটি টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে বসতবাড়ির আশপাশের গাছের লিচুর দাম।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানান, আঁটির লিচু বাজারে উঠছে। বোম্বে লিচু উঠতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। করোনা পরিস্থির কারণে পণ্যবাহী গাড়ির ভাড়া বেশি হওয়ায় এবার লিচুর পাইকার ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলে লিচু ক্রয় করতে আগ্রহ একদমই কম দেখাচ্ছে। তারা এখনও তেমন একটা এ অঞ্চলে আসা শুরু করেন নাই। তাদের সমস্ত পরিস্থিতি অবগত করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

body { font-family: ‘SolaimanLipi’, Arial, sans-serif !important; }