২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,বর্ষাকাল
E-krishi-logo

প্রচ্ছদ > রাজশাহীতে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে পেঁয়াজ

রাজশাহীতে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে পেঁয়াজ

দেশের ইতিহাসে বিগত বছরে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয় রন্ধনশিল্পের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান পেঁয়াজ। দেশজুড়ে এই সংকট মোকাবেলায় পেঁয়াজ চাষে গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। সেই লক্ষ্যে রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে পেঁয়াজ।

জেলায় পেঁয়াজের বিন্দুমাত্র সংকট না হলেও প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। উৎপাদন বাড়াতে ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। দফায় দফায় কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উঠান বৈঠক এবং বিভিন্ন সমাবেশ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। জেলায় হেক্টর প্রতি ১৬ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন ফলনে মোট উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অথচ রাজশাহী জেলায় পেঁয়াজের চাহিদা মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার টন পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

রাজশাহীর চার জেলার উৎপাদিত পেঁয়াজের মধ্যে ‘তাহিরপুরি’ জাতের পেঁয়াজ চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। এ পেঁয়াজ বীজ হিসেবে বাড়িতে সংরক্ষণ করতে সহজ হওয়ায় চাষিরা সহজেই চাষ করতে পারেন। এছাড়া গুণে ও মানে অন্যান্য পেঁয়াজের চাইতে ভালো হওয়ায় দাম বেশি পাওয়া যায়। বাজারে এ পেঁয়াজের বেশ কদর থাকায় বাজারজাত করা যায় নিমিষেই। জেলার মোহনপুর, তানোর, চারঘাট, বাগমারাসহ সবকটি উপজেলার বেশিরভাগই চাষ হয় এ পেঁয়াজ।

মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা ময়েজ উদ্দিন জানান, প্রতি বছরই ১ দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করি। কখন কি ঔষধ দিতে হবে কৃষি কর্মকর্তারা এদিকে আসলে বলে দেন। বীজ পেয়াঁজ বেশি দামে বিক্রি করা যায়। এবার ২ বিঘা জমিতে পেয়াঁজের চাষ করবো। বর্তমানে পেঁয়াজের দাম ভালো আছে। শুনলাম সারাবছরই নাকি পেঁয়াজের দাম থাকবে।

বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা শামিম শাহ্ বলেন, গত বছর রবি মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছিলাম। কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের পরামর্শ দিয়েছিলো তাই চাষ করেছিলাম। ফলন ভালো হয়েছিলো। আমার গ্রামে অনেকেই জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলো। যাদের উঁচু স্থানে বেশি জমি আছে তারা বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়াজ চাষ করতে পারে। তাতে তারা লাভবান হবে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার.কমকে বলেন, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে। রাজশাহী জেলায় পেঁয়াজের চাহিদা মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায়। ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন চাষিরা।

তিনি আরও বলেন, এবছর জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে পেঁয়াজ লাগানোর জন্য উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন সমাবেশের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ভালো ফলন পান সেই জন্য সার, সেচ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হচ্ছে।

প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হলে সেখান থেকে উৎপাদিত পেঁয়াজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় বিক্রি করা যাবে। সরকার ও কৃষি মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। যা বাস্তবায়ন হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে পেঁয়াজে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

রাজশাহীতে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ দেশের জন্য অনেকটাই সুফল বয়ে আনবে। জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে সেসব বাস্তবায়ন হলে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। সেইসাথে দেশের পেঁয়াজ সঙ্কট সমাধানে উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

body { font-family: ‘SolaimanLipi’, Arial, sans-serif !important; }