২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,বর্ষাকাল
E-krishi-logo

প্রচ্ছদ > বিদেশ যাচ্ছে বগুড়ার বাঁধাকপি

বিদেশ যাচ্ছে বগুড়ার বাঁধাকপি

বাঁধাকপি উৎপাদনের জন্য উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সুনাম রয়েছে। প্রতিবছর ভরা মৌসুমে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ হতেন কৃষকেরা। কখনও কখনও চাষের খরচও তুলতে পারতেন না তারা। কিন্তু সেই দিন বদলাতে শুরু করেছে। বগুড়ার বাঁধাকপি এখন রফতানি হচ্ছে ছয়টি দেশে।প্রতি পিস বাঁধাকপি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কিনছে ১৩ থেকে ১৬ টাকায়, মালয়েশিয়ার বাজারে সেটি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শাহাদুজ্জামান জানান, বগুড়ায় উৎপাদিত সবজির মধ্যে এখন বাঁধাকপি মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ ৬টি দেশে রফতানি হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় ৭শ’ টন অর্থাৎ ৪ লাখ ৮ হাজার পিস বাঁধাকপি পাঠানো হয়েছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে। আরও ১৬ কন্টিনিয়ারে ৩৩৬ টন বাঁধাকপি পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। বাঁধাকপি রফতানি হওয়ায় ভালো দাম পেয়ে উৎফুল্ল এখন এই অঞ্চলের বাঁধাকপি চাষিরা।

সবজির এই ভরা মৌসুমে যখন উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সবজি বাজারখ্যাত মহাস্থানহাটে ২-৫ টাকা দরে প্রতিটি কপি বিক্রি হতো, এখন সেই হাটেও ভালো দাম পাচ্ছে কৃষক। আর যেসব চাষি সরাসরি জমি থেকে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে বাঁধাকপি সরবরাহ করছেন তারা পাচ্ছেন আরও বেশি দাম। বাঁধাকপি প্রতি পিস রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কিনছে ১৩ থেকে ১৬ টাকা দরে।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার যুবক সাগর হোসেন বিদেশে এই বাঁধাকপি পাঠানোর উদ্যোক্তা। তার মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে বগুড়ার বাঁধাকপি। এই দুই দেশে ১ হাজার ৫০ টন বাঁধাকপি পাঠানোর জন্য তিনি ইতোমধ্যেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এই কপিসহ অন্যান্য সবজি বিদেশে পাঠাতে বিশেষ প্যাকেজিং কাজের জন্য তিনি নিজ বাড়িতেই প্যাকিংব্যাগ তৈরির কারখানাও স্থাপন করেছেন।

জেলার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলা মূলত সবজি প্রধান। এই উপজেলার জমিগুলো তিন ফসলি হলেও অধিকাংশ জমিতে বছরজুড়েই নানা সবজি উৎপাদন হয়। তারমধ্যে এবার ৩০০ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি এবং ৩০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩২ টন হিসেবে ৩০০ হেক্টর জমিতে এবার ৯ হাজার ৬০০ টন বাঁধাকপি উৎপাদন হবে। তিনি বলেন, মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী বাঁধাকপি রফতানির উদ্যোগ নেয়ায় এবার কৃষকদের হাটে-হাটে এই সবজি নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে না। যদিও তারা বাঁধাকপি কেনার ক্ষেত্রে আগে থেকেই কৃষকদের কিছু শর্ত দিয়েছেন বিশেষ করে বিদেশে রফতানির জন্য অবশ্যই সবজিকে বিষমুক্ত হতে হবে। সেই শর্ত মেনেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কপি তার কাছে বিক্রি করছেন।

মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী সাগর হোসেন জানান, বিগত ২০১৪ সাল থেকে তিনি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাঁধাকপি রফতানি শুরু করেন। এরই মাঝে চট্টগ্রামের মাসোয়া এগ্রো লিমিটেড নামক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী আরিফ আজাদ প্রিন্স মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ঘুরে এসে ওই দুই দেশে বাঁধাকপি রফতানিতে তাকে উদ্বুদ্ধ করেন। ইতিপূর্বে তিনি বছরে ৬ থেকে ১০ কন্টিনিয়ার (প্রতি কন্টিনিয়ারে ১২ হাজার পিস বাঁধাকপি যার ওজন প্রায় ২১ টন) পাঠিয়েছেন। কিন্তু এবার ওই দুই দেশের ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তিনি আগাম ৫০ কন্টিনিয়ার বাঁধাকপি পাঠাতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ইতিমধ্যে বাঁধাকপি জমি থেকে উত্তোলন করে কৃষকরা তার কাছে পৌঁছাতে শুরু করেছেন। তিনি নগদ টাকায় তাদের কাছ থেকে সেসব বাঁধাকপি কিনে উপজেলা সদরের কাফেলা কোল্ড স্টোরেজে তা প্যাকেজিং করে পাঠাতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, বাজারে বাঁধাকপি বিক্রি করে প্রতি পিসে কৃষকরা যে টাকা পেতেন তার চেয়ে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি পাচ্ছেন। তিনি প্রতিপিস কপি নিচ্ছেন ১৩ থেকে ১৬ টাকায়, আর মহাস্থান বাজারে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০-১২ টাকায়।

বগুড়া সদরের লাহেড়ি পাড়া এলাকার কৃষক আবেদ সরকার ৫ বিঘা জমির সবজি আবাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এক বিঘা জমির বাঁধাকপি থেকে প্রায় ৩৫/৩৬ হাজার টাকা লাভ করেছেন।

চট্টগ্রামের মাসোয়া এগ্রো লিমিটেড নামক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী আরিফ আজাদ প্রিন্স জানান, তিনি নিজে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হলেও সম্ভাবনা ও বিদেশি বায়ারদের আগ্রহ দেখে ব্যবসায়িক ঝুঁকি নিয়েই বগুড়ার বাঁধাকপি রফতানির কাজ শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের এই বাঁধাকপি মালয়েশিয়া বাজারে বাংলাদেশি টাকায় ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। পাঠানো থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রি হতে কমপক্ষে ১০-১২ দিন সময় লেগে যায়।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, যখনই কোনো পণ্য বিদেশে যাবে তখন যেমন এলাকার সুনাম বৃদ্ধি পাবে, তেমনি সেই এলাকার কৃষকরা লাভবান হবেন। সেই কাজটিই এখন শুরু হয়েছে শিবগঞ্জে। আলুর পর বাধাকপি রফতানি এই অঞ্চলে নতুন অর্থনীতির দ্বার উন্মোচিত করেছে। কৃষকদের বিদেশে কপি পাঠাতে সরকারি উদ্যোগে যে যে সুবিধা দেয়া প্রয়োজন তা নিশ্চিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জাইকা ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

body { font-family: ‘SolaimanLipi’, Arial, sans-serif !important; }