শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে পানির অভাবে বোরো চাষাবাদ হচ্ছে না উপজেলার শত শত একর কৃষি জমিতে। প্রত্যেক বছর কৃষকেরা নিজস্ব অর্থায়নে সুমেশ্বররি নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি তুললেও গত ২ বছর থেকে নদীর পানি ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাওয়াতে নদীর পানি আর এদিকে আসতে পারে না। এর কারণ হিসেবে নদীতে বালু তুলে নদীর পানি অস্বাভাবিক নিচে নেমে যাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, উপজেলার ২নং রাণীশিমূল ইউনিয়নে অবস্থিত মালাকোচা গ্রামের (জেঁকগারি) মাঠে প্রায় ২৫০ একর জমিতে প্রত্যেক বছর পৌষ মাসে বোরো চাষ শুরু হয় এবং মাঘ মাসে বোরো চারা রোপন করে, আর বৈশাখ মাসে এই ধান কাটেন তারা। কিন্তু এ বছর পানির অভাবে প্রায় ২০০ একর জমিতে বোরো চাষ করতে পারেনি কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মালাকোচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উত্তরে পাহারের পাদদেশ পর্যন্ত প্রায় ২০০ একর জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে রয়েছে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই মাঠে ছোট পাম বা সাধারণ মেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উঠেনা। প্রতিবছর সুমেশ্বরী নদীর পানি দিয়ে বোরো আবাদ করা হয়। কিন্তু গত বছর থেকে নদীর পানি আর বাঁধ দিলেও উঠেনা। খাল থেকে মেশিন দিয়ে কিছু জমি আবাদ করা হলেও যথা সময়ে পানি দিতে পারেনি বলেও অভিযোগ কৃষকদের।
এ ব্যাপারে কৃষক আকবর আলী বলেন, ‘এই মাঠে আমার ২ একর জমি পড়ে আছে। পানির অভাবে বোরো আবাদ করতে পারিনি। শুধু আমন ধান আবাদ করছিলাম। শুধু আমার নয় আমার মতো আরও অনেকজনের মাথায় হাত। তিনি আরও বলেন, অনেক খাল থেকে মেশিন দিয়ে কিছু জমি আবাদ করলেও যথা সময়ে পানি দিতে পারেনি। আর সামনের বছর নদীর পানি আর আসবে না। সরকার আমাদের মাঠে একটা ডিপ মেশিন দিলে ভালো হতো।’
কৃষক আসমত মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, এই মাঠে ছোট মেশিন বা মোটর দিয়ে পানি উঠেনা। তাই এতো জমি অনাবাদী পড়ে আছে। ডিপ মেশিন দিলে এখানে প্রায় ২৫০ একর জমি ভালোভাবে বোরো আবাদ করা যাবে।’
এ ব্যাপারে মালাকোচা গ্রামের উপ সহকারী কৃষি অফিসার আব্দুল হাকিম বলেন, এই মাঠে পূর্বে নদী বাঁধ দিয়ে বোরো আবাদ করতো; কিন্তু এখন নদীর পানি না আসাতে অনেক জমি অনাবাদী রয়েছে।
রাণীশিমূল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, ‘আমার এলাকাতে আগে থেকে পানির এমন সমস্যা। পূর্বে নদীর পানি দিয়ে বোরো আবাদ করা হতো; এখন নদীর পানি কমে যাওয়াতে অনেক জমিতে বোরো আবাদ হয় না। এর স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।’
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী আল বাকী বলেন, ‘সেই জায়গাতে কোনো নদী নেই; নদী থাকলে নদী থেকে সেচ এর পানি সরকারিভাবে একটা ব্যবস্থা করা যেত। এখন সরকারিভাবে ডিপ মেশিনের কোনো অনুমোদন নেই, তবে কেউ যদি ব্যক্তিগত খরচে দিতে চায়; তাহলে অবস্থা বিবেচনা করে বিএডিসি থেকে অনুমতি নিয়ে দিতে পারবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিলুফা আক্তার বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। এর আগে কেউ আমাকে জানায়নি। আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব।’