২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,বর্ষাকাল
E-krishi-logo

প্রচ্ছদ > তবুও আলুর সংকট কাটেনি

তবুও আলুর সংকট কাটেনি

আলু নিয়ে সংকট এখনো কাটেনি। সরকার দাম বেঁধে দেওয়ার পরেও নির্ধারিত দামে কোথাও আলু বিক্রি হচ্ছে না। উল্টো ব্যবসায়ীরা নানা ফন্দি-ফিকির করে আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। রোববার গাজীপুরের কাপাসিয়ার বাজারে আলু পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ভোক্তারা বিপাকে পড়ছেন।

আলু শূন্য কাপাসিয়া বাজার, ক্রেতারা বিপাকে ভোক্তাপর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করার বিজ্ঞপ্তি জারি ও বাজার তদারকির পর শনিবার-রোববার সারাদিন কাপাসিয়া বাজারের কোনো দোকানে আলু পাওয়া যায়নি। হঠাৎ করে বাজার থেকে আলু উধাও হয়ে যাওয়ায় ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে।

সম্প্রতি সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর, গত ১৫ অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. ইসমত আরা উপজেলার সব আলু ব্যবসায়ীকে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে নির্দেশ প্রদান করেন। পরের দিন গত শুক্রবার সকালে তিনি সরেজমিনে কাপাসিয়া বাজার পরিদর্শন করলে বিক্রেতারা ৩০ টাকা দরে আলু বিক্রি শুরু করে। আলুর দোকানগুলোয় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লেগে যায়। পরে পাইকারি ও খুচরা আলু বিক্রেতাদের অনেকেই তাদের গোডাউন থেকে গোপনে আলু সরিয়ে ফেলেন। ফলে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে শুক্রবার বিকালে বাজারে আলুর সংকট দেখা দেয় এবং গত শনি ও রোববার সারাদিন কাপাসিয়া বাজারের কোনো দোকানেই ক্রেতারা আলু খুঁজে পায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আলু বিক্রেতা জানান, মোকাম থেকে ৪৩ টাকা দরে আলু কিনে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করায় একদিনেই তাদের ১৫-২০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। ফলে সরকার যদি পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে খুচরা বাজারে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর রাখেন, তবে তাদের পক্ষে আলু বিক্রি করা সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. ইসমত আরা জানান, মাঠপর্যায়ে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে তিনি বদ্ধপরিকর। বর্তমানে কাপাসিয়া বাজারে আলুর সংকটের বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন এবং এ সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

পাকুন্দিয়ায় আলুর কৃত্রিম সংকট কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সব বাজারের প্রায় প্রতিটি দোকান নেই কোনো গোল আলু। এক মাস আগে বাজারে আলু ৩০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত, মাস ঘুরতে না ঘুরতে সেই আলুর দাম এখন বেড়েছে দুই গুণ। গতকাল পাকুন্দিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারে খুচরা প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রোববার (১৮ অক্টোবর) পাকুন্দিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারের খুচরা দোকানে নেই কোনো আলু। খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, পাইকারি বাজারে কোনো আলু নেই। চাহিদা থাকার পরেও ক্রেতাসাধারণ আলু না পেয়ে কিছু ক্রেতা কচুর মুখি নিচ্ছেন।

একাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, স্টোর ভাড়া ও আলু ক্রয়সহ সব মিলিয়ে ১৮ টাকা খরচ হয়েছিল। সেই আলু গত মাসে আমরা ২২ থেকে ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। এর এক সপ্তাহ পর আমরা আবার ২৮ টাকা এবং গত সপ্তাহে ৪২ টাকা কেজিতে ক্রয় করার পর সরকার সেটি ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রির জন্য মাইকিং করে। এখন আমাদের আবার মূলধন হারানোর পথে। আলুর ব্যবসা করে গত তিন বছর আমরা লোকসান দিয়েছি লাখ লাখ টাকা হারিয়েছি। তিন বছর লোকসান হলো তখন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, এ বছর হঠাৎ আলুর দাম বাড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো করোনার ভয়াবহ সময়ে ত্রাণ বিতরণে ব্যাপকহারে আলুর ব্যবহার হয়েছে। এতে আলুর আড়ত সহ স্থানীয় বাজারে আলুর সরবরাহ কমে যায়। এতে দাম বাড়তে থাকে। অন্যান্য সবজির দাম বাড়ার সঙ্গেও আলুর দাম বাড়ার কারণ জড়িত আছে। তবে এখন স্থানীয় পর্যায়ে আলু খুব বেশি নেই, আলুর জোগান কমে আসায় দাম বাড়ছে। বাজারে নতুন আলু উঠলে দাম কমবে।

উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, যদি কোনো ধরনের মজুত বা সিন্ডিকেট হয় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা্‌ নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

body { font-family: ‘SolaimanLipi’, Arial, sans-serif !important; }