২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,বর্ষাকাল
E-krishi-logo

প্রচ্ছদ > জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন কুষ্টিয়ার পানচাষীরা

জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন কুষ্টিয়ার পানচাষীরা

বাংলাদেশ শাক-সবজি, ফল ও পান ফসলের পোকামাকড়, রোগবালাই ব্যবস্থাপনায় জৈব বালাইনাশক ভিত্তিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প, কীটতত্ত্ব বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএসআরআই) গাজীপুর এর অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট কুষ্টিয়া অফিস সরেজমিন গবেষণা বিভাগের উদ্ভাবিত জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহার করে সফলতা পাচ্ছেন কুষ্টিয়ার পানচাষীরা।

এই পদ্ধতি ব্যবহার করে পান চাষিরা ইতোমধ্যে ভালো ফল পেতে শুরু করেছেন। আর্থিকভাবেও বেশ লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের পানচাষীরা।

এ জৈব বালাইনাশক পদ্ধতিতে পান চাষ করে এক দিকে যেমন স্বাস্থ্য সম্মত পান উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে, তেমনি আগের তুলনায় পানের ফলনও বেড়েছে । এতে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে এই পান।

কুষ্টিয়া জেলা বরাবরই পান চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। বিশেষ করে জেলার সদর উপজেলা, মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলায় ব্যাপক হারে এ অর্থকরী ফসলের আবাদ হয় বহু বছর ধরে। এ ফসলের রোগ বালাইও কম নয়। এতোদিন ধরে এ অঞ্চলের পান চাষীরা কীটনাশকের দোকান থেকে প্রচলিত কীটনাশক ক্রয় করে ব্যবহার করে বালাই দমন করে আসছিলেন।

প্রচলিত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এই পান অনেক সময় মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। পান যেন মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারন না হয় সেই লক্ষে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট কুষ্টিয়া অফিস সরেজমিন গবেষণা বিভাগ জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে পান চাষিরা ইতোমধ্যে ভালো ফল পেতে শুরু করেছেন।

এছাড়াও এ পদ্ধতিতে পান চাষ করে কুষ্টিয়ার পান চাষীরা এক দিকে যেমন স্বাস্থ্য সম্মত পান উৎপাদন করছেন, তেমনি আগের তুলনায় বেড়েছে পানের ফলন। জৈব বালাইনাশক পদ্ধতিতে উৎপদিত স্বাস্থ্য সম্মত এ পান বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশীক মুদ্রা আয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।

এ জৈব বালাইনাশক পদ্ধতির আওতায় হলুদ আঠালো ফাঁদ, তুঁতে, চুন ও পানির সংমিশ্রণ ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই পদ্ধতি ব্যবহার করে পানের অনেক রোগ বালাই কমে যাওয়ার কারনে আগের তুলনায় পানের ফলনও বেড়েছে। এর ফলে পান চাষে নতুন করে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেক চাষী।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট কুষ্টিয়ার এ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দুই জেলা চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের পান চাষীরাও জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি সুবিধা পাচ্ছেন। এতে অনেকটাই খুশী এ অঞ্চলের পান চাষীরা।

এ ব্যাপারে পান চাষী মো. অহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এ আগে পান চাষ করেছি সে সময় পানের পাতা পঁচা, লতা পঁচা খুব বেশি পরিমানে দেখা দিতো এর ফলে পান চাষ করে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।এখন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট কুষ্টিয়ার গবেষণাকরা আমাদের যে ওষুধ প্রয়োগ করতে দিয়েছে এগুলো দিয়ে আমরা অনেক উপকার পেয়েছি। এখন আমাদের পান ভালো হচ্ছে, পানের পাতাও বড় হচ্ছে। এর ফলে পান চাষ করে এখন আমরা ভালো আয় করতে পারছি।

অপর আর এক পান চাষী মো. আবুল কাশেম বলেন, আগে আমরা পানে যে কীটনাশক ব্যবহার করতাম তাতে আমরা ভালো ফলন পেতাম না, পান পঁচে যেতো পান গাছ মরে যেত কিন্তু এখন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট কুষ্টিয়ার ফর্মূলা অনুযায়ী তাদের নির্দেশনায় যে বালাই নাশক ব্যবহার করছি এতে আমাদের পানের রোগ বালাই কমে গিয়েছে এখন আমাদের পানের ফলন ভালো হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলাতে আমাদের বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের পানের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। সুধু দেশে নশ দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমাদের উৎপাদিত পান বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে।

এ বিষয়ে সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বারি, কুষ্টিয়ার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ড. জাহান আল মাহমুদ বলেন, বহু বছর যাবত এই এলাকা পান চাষের জন্য বিখ্যাত এই এলাকার পান বিদেশে রপ্তানী হয়। এই পানে কিছু সমস্যা হয়। পান চাষীরা পোকামাকড়, রোগব্যাধী দমন করার জন্য ক্ষতিকর বালাইনাশক ব্যবহার করতো। আমরা বিগত তিন বছর ধরে এই এলাকায় গবেষণা করছি। আমরা পানচাষীদের জৈব বালাইনাশক ট্রাইকোডার্মা ফিজি মাইট, পোকা দমনের জন্য ইয়েলো স্টিকি ট্যাপ ব্যবহারের পরামর্শ দিই। এই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে এখন পান চাষীরা সম্পূর্ণ নিরাপদভাবে পান উৎপাদন করছেন। এই পান শরীরে কোনো ক্ষতি করে না। ট্রাইকোডার্মা পাউডার মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়ার ফলে পানের ফলন আশানুরূপ হচ্ছে এর ফলে পান চাষীরা পানের ভালো দাম পাচ্ছেন এতে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।এর ফলে এখানকার চাষীরা বেশ খুশি তারা এখন তাদের অন্যান্য জমিতেও পান চাষের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, পানে ছাত্রাকের যে সংক্রমণ অথবা এই পানেই যদি বিষাক্ত বালাইনাশক ব্যবহার করা হয় তাহলে এটি কিন্তু পানের মধ্যে থাকছে। এর পরে এই পানটি যে কিনে খাবে তাহলে সে কিন্তু সরাসরি বিষ খাবে। এই বিষয়টি আমরা পান চাষীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের বিজ্ঞানীরা পানের পাতা ও কান্ড পঁচা যে রোগ কতগুলো সাকিং পেস্ট আছে পাতা শোষণকারী পোকা আছে সেগুলো দমনের জন্য যে জৈব বালাইনাশক ভিত্তিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছি। এই উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পান চাষীরা নিরাপদ পদ্ধতিতে পান চাষ করতে পারছেন। এই নিরাপদ পান খেলে আগের মতো কেউ স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে না। আমরা বিগত তিন বছর পান অধ্যুষিত এলাকার পান চাষীদের আমার বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের আশা আছে এই প্রকলল্পের কার্যক্রম যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে আরও অধিক সংক্ষক পান চাষীকে এর আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

body { font-family: ‘SolaimanLipi’, Arial, sans-serif !important; }