বীজতলা তৈরি ও চারা উৎপাদন: কর্দম ও শুকনো দুই অবস্থায়ই রোপা আমনের বীজতলা তৈরি করা হয় কিন্তু বোরোর বেলায় শুধু কর্দম বীজতলা করা হয়। রোপা আমন/ বোরো চাষের প্রথম কাজ হচ্ছে বীজতলা তৈরি ও চারা উৎপাদন করা।
কর্দম বীজতলা প্রস্তুতি: বীজতলা তৈরির জন্য উঁচু ভূমি নির্বাচন করা দরকার যেখানে বর্ষার পানি দাঁড়ায় না। বীজতলা কত বড় হবে তা নির্ভর করে কৃষকের মূল জমি কত বড়। মূল জমি যদি এক হেক্টর হয় তবে সাড়ে সাত কাঠা জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে। দেশি মাপে এক বিঘা জমির জন্য এক কাঠা বা ৭০ বর্গমিটার পরিমাণ বীজতলার প্রয়োজন। নিচে এক কাঠা জমিতে কীভাবে বীজতলা তৈরি করা যায় তা ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলো।
ধাপ- ১: ১০×৭ বর্গ মিটার জমি নির্বাচন করা। অত:পর এই নির্বাচিত জমিতে ২০০ – ২৫০ কেজি গোবর বা কমপোস্ট প্রয়োগ করা। এরপর জমিতে ২ – ৩টি চাষ এমনভাবে দেওয়া যেন গোবর বা কমপোস্ট মাটির সাথে মিশে যায়।
ধাপ- ২: সঠিকভাবে চাষের পর (১০×১.৭৫) বর্গমিটার পরিমাণ ৪টি খণ্ড করা। জমির চার পাশে ২৫ সেমি নালার জন্য ফাঁক রেখে খণ্ড করতে হবে। এক খণ্ড থেকে অপর খণ্ডের মাঝে প্রায় ৩০ সেমি. ফাঁক থাকবে। আর ফাঁক জায়গা থেকে ১৫ সেমি. গভীর নালা করে মাটি উভয় দিকে ফেলা ও বীজতলা উঁচু করা। এই নালার সাহায্যে বীজতলায় পানি সেচ ও নিষ্কাশন সহজতর হয়।
ধাপ- ৩: এই ধাপে বীজতলায় সার প্রয়োগ করা হয়। ইউরিয়া ২৫০ গ্রাম, টিএসপি ২৫০ গ্রাম এবং এমপি ১২৫ গ্রাম বীজতলায় ছিটিয়ে কাদা করা।
ধাপ- ৪: বীজতলায় সার ছিটিয়ে কাদা করার পর সুস্থ ও পুষ্ট বীজ বুনতে হবে।
শুকনো বীজতলা কর্দম বীজতলার ন্যায় প্রস্তুত করা হয়। এর জন্য বীজতলা কাদা না করে মাটি ঝুরঝুরা করে ৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে। আর নালায় পানি প্রবাহিত করে মাটিকে সিক্ত করা হয়।নিয়মিত ও প্রয়োজনমতো যত্ন করলে চারা গজাবে এবং ২৫-৩০ দিন বয়স হলে মূল জমিতে রোপণের উপযুক্ত হবে।
মূল জমি প্রস্তুত: জমি প্রস্তুতির সর্বপ্রথম কাজ হলো জমি চাষ দেওয়া। জমি চাষ বলতে বোঝায় ফসল ফলানোর উদ্দেশ্যে যন্ত্রপাতির সাহায্যে জমির উপরের স্তরের মাটি আলগা করা যাতে সুষ্ঠুরূপে বীজ গজায় এবং ফসলের বৃদ্ধি ঘটে।
চারা রোপণের জন্য মূল জমি প্রস্তুত করা: রোপা আমন, খরিপ-২ এর ফসল। যখন প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং জমিতে ৪-৫ বার চাষ ও বার দুয়েক মই দিয়ে কাদা করা হয়। আজকাল পাওয়ার ট্রিলারের সাহায্যে রটোভেটর লাগিয়ে সহজে ভেজা মাটিকে কাদা করা যায়। জমিতে পূর্ববর্তী ফসলের গোড়া বা আবর্জনা থাকে সেগুলো কাদায় ঢেকে যায়। এগুলো ঠিকমতো পচার জন্য ১০-১৫ দিন সময় লাগে। আবর্জনাগুলো সম্পূর্ণ পচে গেলে জমি চারা রোপনের উপযুক্ত হয়। বোরো মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয় না। তখন সেচের মাধ্যমে জমি ভিজিয়ে কাদা করতে হয়। জমিতে কাদা করার সময় ক্ষেতের চারদিকের আল ঘেষা জমি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে ঠিক করে নিতে হবে। পানি আটকানোর জন্য জমির ঢাল অনুসারে জমিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করার দরকার হয়ে পড়ে। তা না হলে পানি ঢাল বেয়ে একদিকে চলে যায়। এতে পানির অপচয় হয় এবং সার প্রয়োগ করতেও অসুবিধা হয়।