২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,বর্ষাকাল
E-krishi-logo

প্রচ্ছদ > গাজর চাষ ও পরিচর্যা

গাজর চাষ ও পরিচর্যা

শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে গাজর একটি। এ ফসলটি সারা বছর হলেও শীতে ফলন দেয় বেশি। অন্যান্য সময়ে এর ফলন হয় কম। তাই শীতকালীন সবজি হিসেবে গাজর যেমন পরিচিত তেমন জনপ্রিয়ও বটে। এর ইংরেজি নাম Carrot ও বৈজ্ঞানিক নাম Daucus carota. আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গায় গাজর চাষ করা হয়। তবে যশোর, মানিকগঞ্জ, নরসিংদি, পাবনা প্রভৃতি জেলায় গাজর উৎপাদন বেশি হয়।

ভিটামিন : গাজর খুব ক্যারোটিন, ভিটামিন ‘এ’, থায়ামিন ও রিবোফ্লোবিন সমৃদ্ধ সবজি। এর সবুজ পাতা ও পুষ্টিকর, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ। কালোরঙা গাজর দিয়ে এক রকম সুধাবর্ধক পানীয় তৈরি হয়।

জাত : গ্রীষ্ম ও নাতিশীতোষ্ণ ২ ভাগে ভাগ করা যায়। কালো, লাল, বেগুনে ও হলদে বিভিন্ন রঙে পাওয়া যায়।

গ্রীষ্মকালীন জাত : পুসা কেশর, পুসা মেঘালি ও অরেঞ্জ জিনো।

চাষের সময় : সমতল অঞ্চলে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর ও পাহাড়ি এলাকায় মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বোনা যায়। গাজর বীজ থেকে অঙ্গুর বের হতে ৭-১০ দিন সময় লাগে।

জমি তৈরি ১. গাজরের শেকড় মাটির বেশ ভেতরে প্রবেশ করে; তাই জমি ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি গভীর করে চাষ দিতে হবে।
২. ৪ থেকে ৫টি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করতে হবে।
৩. জমির ঢেলা ভেঙ্গে মাটি ঝরঝরে করতে হবে।
৪. জমিতে ৮-১০ ইঞ্চি দূরে দূরে সারি তৈরি করতে হবে।

সার প্রয়োগ কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে গাজর চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।

বীজের পরিমাণ : একরে বীজ লাগবে দেড় থেকে ২ কেজি। বীজ বোনার ৮০-৯০ দিন পর প্রথম ফসল ওঠে। ২০×১০ সেন্টিমিটার দূরত্ব গাছ থাকবে।

পরিচর্যা : ১. ঘন চারা গাছগুলো নিড়ানি দিয়ে বা চক্রবিদ্যা চালিয়ে গাছ পাতলা করে দিতে হবে। গাজর চাষে আগাছানাশক ওষুধ কার্যকরী। শুষ্ক ও বেশি আর্দ্র ২ রকম জমিই গাজর চাষের পক্ষে ক্ষতিকারক। কাজেই জমিতে পানির চাহিদা বুঝে সেচ দিতে হবে।
২. চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর ৪ ইঞ্চি দূরে দূরে একটি করে সবল চারা রেখে বাকী চারাগুলো তুলে ফেলতে হবে।
৩. জমিতে আগাছা থাকলে পোকামাকড়, রোগ জীবাণু ও ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হয়। তাই জমিতে আগাছা জন্মালে তা তুলে ফেলতে হবে।

রোগ বালাই

গাজরের হলুদ ভাইরাস রোগ : গাজরে খুব একটা রোগ বালাই ও পোকামাকড় দেখা যায় না। তবে অনেক সময় লীফ হপার পোকার মাধ্যমে গাজরে হলুদ ভাইরাস রোগ দেখা যায়। এর আক্রমণে গাজরের ছোট বা কচি পাতাগুলো হলুদ হয়ে কুঁকড়িয়ে যায়। পাতার পাশের ডগাগুলো হলুদ ও বিবর্ণ হয়ে যায়।

জাবপোকা : এই পোকা গাজরের পাতা ও গাছের কচি অংশের রস চুষে খেয়ে ফসলের অনেক ক্ষতি করে।

পচারোগ : মূল ও পাতার গোড়ায় ব্যাক্টেরিয়াজনিত পচন রোগ দেখা যায়। নাইট্রোজেন সার অতিরিক্ত প্রয়োগে এ রোগ বেড়ে যায়।

প্রতিকার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।

ফসল সংগ্রহ বীজ বপনের ৩ মাসের মধ্যে গাজর সংগ্রহের উপযোগী হয়। তবে ভালো ফলন পেতে হলে ১০০ দিনের আগে ফলস তোলা উচিত নয়। পুষ্ট ও ভালোমানের গাজর পেতে হলে বীজ বোনার ১০০ থেকে ১২৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।
এগ্রোবাংলা ডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

body { font-family: ‘SolaimanLipi’, Arial, sans-serif !important; }