বাংলাদেশে আম হলো ফলের রাজা

Ads

বাংলাদেশে আম হলো ফলের রাজা এবং গাছ হলো জাতীয় আমগাছ। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই আমের মুকুলের মিষ্টি গন্ধে সুবাসিত হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। আম সাধারণত উষ্ণ ও অবউষ্ণম-লীয় অঞ্চলের জন্মে। ইন্দো-বার্মা অঞ্চলে আমের উৎপত্তিস্থল বলে ধারণা করা হয় তবে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে আম সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল কারণ এ ফল বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার, পুষ্টিমান ও স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। বাংলাদেশে প্রায় সব অঞ্চলে আম জন্মে কিন্তু দেশের উরাঞ্চলে এর বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। অনেকেই শখ করে আমগাছ রোপণ করি ভালো ফলনের আশায় কিন্তু সময় মতো সামান্য যত্নের অভাবে আমের মুকুল ও গুটি ঝড়ে যায় অথচ সময় মতো একটু যত্ন নিলেই আমরা পেতে পারি সুস্বাদু আমের স্বাদ।

ফলন্ত আম গাছের পরিচর্চা : আম গাছের ফলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ফলন বাড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত পরিচর্চাগুলো করা একান্ত প্রয়োজন।

পরগাছা দমন : আমগাছে একাধিক জাতের আগাছা জন্মাতে দেখা যায়, যা গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের প্রতি ক্ষতিকর। পরগাছাসমূহে শিকড়ের মতো এক প্রকার হস্টোরিয়া হয়, যা গাছের মধ্যে প্রবেশ করে রস শোষণ করে এবং দুর্বল করে। পরগাছার পাদুর্ভাব বেশি হলে গাছের পাতার আকার ছোট হয় ও ফ্যাকাসে হয় এবং অনেক সময় গাছ মারা যায়। এর ফলে গাছের ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। তাই ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই পরগাছা অপসারণ করতে হবে।

সার প্রয়োগ : গাছের বৃদ্ধি ও ফল উৎপাদনের জন্য সারের ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন। ফলন্ত গাছের আকার, বয়স ও মাটির উর্বরতার ওপর সারের পরিমাণ নির্ভর করে। দুপুর বেলা যতটুকু স্থানে ছায়া পড়ে সেটুকু স্থানে মাটি কুপিয়ে সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।

সেচ প্রয়োগ : সাধারণত জমির ওপর স্তরে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান থাকে বা সার হিসেবে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয় তাই আম বাগানের ওপরের ২-৩ মিটার অংশকে জমির পানি সংরক্ষণ স্তর হিসেবে ধরা হয়। তাই শুষ্ক মৌসুমে আম বাগানে পানি সেচ দেয়া দরকার। আমের গুটি মটর দানারমতো হওয়ার পর থেকে ১৫-২০ দিন পর পর ২-৩ বার সেচ দিলে আমের গুটি ঝরা বন্ধ হয়।

বয়স্ক টক আমগাছকে মিষ্টি আমগাছে রূপান্তরকরণ : বাগানের কোনো গাছের আমের গুণাগুণ খারাপ হলে সে গাছকে নষ্ট না করে ভিনিয়ার কলমের মাধ্যমে উন্নতি সাধন করা য়ায়। বয়স্ক গাছের ২-৩টি ডাল কেটে দিলে সেখান থেকে নতুন শাখা বের হলে তার পর নতুন শাখাতে ভিনিয়ার কলম করে নিতে হবে। এভাবে ৩-৪ বারে কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

পুরনো বাগান নবায়ন : আম বাগানের বয়স বেশি হলে ফল ধারণ কমে যায়, তাই এ ক্ষেত্রে গাছ কেটে না ফেলে পুরনো গাছের ভারি শাখা কেটে দিলে সেখানে নতুন শাখা বের হবে এবং গাছ নবায়ন হয়ে যাবে। এভাবে ২-৩ বছরে বাগান নবায়ন করা যায়।

ফসল সংগ্রহ : ফল ধরার ৩-৫ মাসের মধ্যেই জাতভেদে ফল পাকা শুরু করে। বাণিজ্যিকভাবে কখনো সম্পন্ন পাকা অবস্থায় আম গাছ থেকে পাড়া ঠিক নয়। গাছের ফল দুই চারটি পাকা শুরু করলে বাঁশের কোটার মাথায় থলে সদৃশ্য জালতি লাগিয়ে আম পাড়তে হবে যেন আঘাত না লাগে। গাছের নিচে সাময়িক ভাবে রাখতে হলে খড় বিছিয়ে তার ওপর রাখতে হবে। নিম্নোক্ত লক্ষণ দেখে ফল সংগ্রহ করতে হবে : ১. আমের বোঁটার নিচে হলুদ বর্ণ ধারণ করলে। ২. পানিতে দিলে ডুবে যাবে। ৩. কষ বের হলে দ্রুত শুকে যাবে। ৪. দুই একটি পাকা আম গাছ থেকে ঝরে পড়বে।

ফল সংরক্ষণ : আম পচনশীল ফল। বেশি পাকা অবস্থায় সংগ্রহ করলে সংরক্ষণকাল কম হয়। অধিকাংশ জাতের আম ১৩-১৭ ডিগ্রি সে. তাপমাএায় ও ৮৫-৯০% আপেক্ষিক আর্দ্রতায় বাঁশের ঝুড়ি, বাস্কেট, খড় বিছানো স্থানে ৪-৭ সপ্তাহ সংরক্ষণ করা যায়।

Ads
আপনি এটাও পছন্দ করতে পারেন
Loading...