শিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। এর বিচিও পুষ্টিকর সবুজ হিসেবে খাওয়া হয়। এটি জমি ছাড়াও রাস্তার ধারে, আইলে, ঘরের চালে, গাছেও ফলানো যায়।
মাটি : দোআঁশ মাটি শিম চাষের জন্য উত্তম। তবে উত্তম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সব ধরনের মাটিতে শিম চাষ করা যায়।শিমের জাত : বারি শিম-১, বারি শিম-২, বারি শিম-৩, বারি শিম-৪, ইপসা শিম, ঘৃত কাঞ্চন, কার্তিকা, নলডক, বাঘনখা, বারমাসি প্রভৃতি শিমের জনপ্রিয় জাত।
বীজ বপনের সময় : মধ্য জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। তবে এখন বারোমাসি যে শিম বীজ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো দিয়ে বারোমাস শিম চাষ করা সম্ভব।
জমি তৈরি : বেশি জমিতে আবাদ করলে জমি কয়েকটি চাষ ও মই দিয়ে ঢেলা ভেঙে সমান করতে হবে। তবে বসতবাড়ির আশে পাশে, পুকুর পাড়ে, পথের ধারে ও জমির আলে সাধারণত শিমের চাষ করা হয়।
মাদা তৈরি : জমিতে মাদা (গর্ত) ৪৫ সেমি ক্ম ৪৫ সেমি ক্ম৪৫ সেমি আকারে তৈরি করতে হবে। এক মাদা থেকে আরেক মাদার দূরত্ব ২.৫-৩ মিটার।
সার প্রয়োগ : প্রতিটি মাদা পচা আবর্জনা সার দিয়ে পূরণ করতে হবে। তারপর প্রতিটি মাদায় খৈল গুঁড়া, ছাই, টিএসপি, মিউরেট অব পটাশ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। মাদাটি এমনভাবে ভরতে হবে যেন মাটি থেকে ভরাটকৃত মাদার উচ্চতা ১০ সেমি হয়। শিম ফসলটিতে নাইট্রোজেন সারের তেমন দরকার হয় না। কারণ এটি লিগুম পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ফসল। এদের শিকড়ে নডিউল বা গুটি তৈরি হয় যাতে প্রচুর বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেন জমা থাকে।
বীজ বপন : সার প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর প্রতি মাদায় ৫-৬ টি বীজ বপন করতে হবে। চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় ২টি সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।
পরিচর্যা : গাছ ঠিকমত বাড়ার জন্য মাচা দিতে হবে। গাছের গুঁড়ার মাটি শক্ত হলে নিড়ানি দিয়ে তা আলগা করতে হবে। মাটিতে রসের অভাব হলে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষায় যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে সে জন্য গোড়ায় মাটি উঠিয়ে দিতে হবে। চারা বড় হতে থাকলে ১৫-২০ দিন পর পর ২-৩ কিসিত্মতে ৬০ গ্রাম টিএসপি ও ৬০ গ্রাম এমপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
বালাই ব্যবস্থাপনা : শিম গাছে জাব পোকা, থ্রিপস, পড বোরার ইত্যাদির আক্রমণ হতে পারে। জাব পোকা নতুন ডগা, পাতা, ফুল ও ফল ইত্যাদির রস চুষে খায়। নিমের বীজের শাঁস পিসে পানিতে মিশিয়ে সেপ্র করে এদের দমন করা যায়। ভাইরাস আক্রানত্ম গাছগুলো মাটিসহ উঠিয়ে গভীর গর্তে পুঁতে দিতে হবে।
ফসল সংগ্রহ : জাত ভেদে বীজ বপনের ৯৫-১৪৫ দিন পর শিম গাছ থেকে শিম উঠানো যায়। বীজ হিসাবে শিম সংগ্রহ করতে শিম যখন গাছে শুকিয়ে হলদে বর্ণ হয়, তখন সংগ্রহ করা হয়। শিম থেকে বীজ বের করে পরিষ্কার ও শুষ্ক পাত্রে নিমের শুকনা পাতার গুঁড়াসহ সংরক্ষণ করতে হবে।
ফলন : জাতভেদে শিমের ফলনের তারতম্য হয়ে থাকে। যেমন- বারি শিম-১ জাতের শিমের বীজ হেক্টরপ্রতি ২-৩ টন (৮-১২ কেজি/শতক) উৎপাদিত হয়। সবজি হিসাবে শিম পুরা মৌসুমে উঠানো যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে শিম ধরে। শিম গাছ ৪ মাসেরও বেশি ফলন দেয়।