১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,শরৎকাল
E-krishi-logo

প্রচ্ছদ > যশোরের পোল্ট্রি শিল্পে করোনার থাবা

যশোরের পোল্ট্রি শিল্পে করোনার থাবা

করোনার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে যশোরাঞ্চলের পোল্ট্রি শিল্পে। ৩২ টাকা খরচে উৎপাদিত প্রতিটি বাচ্চা ফ্রি দিলেও খামারীরা নিতে চাচ্ছেন না। আবার স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন প্রক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ রাখা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনছেন হ্যাচারি মালিকরা।

একইসঙ্গে পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত খামারী ও ফিড উৎপাদনকারীরাও লোকসানের বোঝা বইছেন। সম্ভাবনাময় এ শিল্প বন্ধের আশঙ্কায় দিন গুনছেন এক হাজার খামারের পাঁচ হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবার।

যশোরাঞ্চলে আফিল হ্যাচারি, কাজী ফার্মসসহ পাঁচটি হ্যাচারিতে প্রতিদিন চার লাখ বাচ্চা উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদনে হ্যাচারি মালিকদের খরচ হয় ৩২ টাকা। করোনার প্রভাবে পোল্ট্রি মুরগির বিকিকিনিতে এক প্রকার ধ্বস নেমেছে। হ্যাচারি থেকে খামারিরা বাচ্চা কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন।

যশোরের সবচেয়ে বেশি বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আফিল এগ্রো লিমিটেড প্রতিদিন এক লাখের বেশি বাচ্চা উৎপাদন করে। এ ফার্মের টেকনিক্যাল ম্যানেজার তোফায়েল আহমেদ জানান, ডিম পাড়ানোর চার মাস পূর্বে একটি মুরগী প্রস্তুত করা হয়। এ মুরগী টানা দেড় বছর ডিম দেয়। প্রতিদিন বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ২১দিনের ডিম ইনকিউবেটর মেশিনে চাপাতে হয়। একদিন বয়সী বাচ্চা বিক্রি করা হয়। বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ করতে হলে কমপক্ষে ২১দিন অপেক্ষা করতে হয়। আবার উৎপাদন প্রক্রিয়া একবার বন্ধ করলে পুনরায় চালু করা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ। সে ক্ষেত্রে হ্যাচারি একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। এতে প্রতিষ্ঠানটি শত শত কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়বে।

পোল্ট্রি শিল্পের সবচেয়ে বড় বিপনন কোম্পানি তামিম মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) খন্দকার ইদ্রিস হাসান জানান, একদিন বয়সী প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদন খরচ ৩২ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে এক টাকারও কমে। তাও আবার ক্রেতা খুঁজে আনতে হচ্ছে। শুধু বাচ্চা নয় লেয়ার মুরগীর ডিম ও পোল্ট্রি ফিডেও এর প্রভাব পড়েছে।

তার দেওয়া তথ্যমতে যশোরাঞ্চলে আফিল, কাজী, চীফ, প্রভিটা ও প্যারাগনের ফিড মিল রয়েছে। এ সব মিলে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ টন ফিড উৎপাদিত হয়। চাহিদা কমে যাওয়ায় ফিডের বিকিকিনিও কমে গেছে।

তামিম মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের উপ ব্যবস্থাপক (ব্রয়লার) আবদুল মুকিত জানান, যশোরাঞ্চলের এক হাজার খামার থেকে প্রতিদিন গড়ে ১১ লাখ কেজি ব্রয়লার মুরগীর মাংস উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে শুধু আফিল ফার্ম খেকে উৎপাদিত হয় দিনে ২৫ হাজার কেজি। এক কেজি ব্রয়লার মুরগীর মাংস উৎপাদনে খরচ হয় ১১০ টাকা। বর্তমানে বাজার পড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের বাজারও পড়তির দিকে বলে জানান তিনি।

যশোরাঞ্চলে প্রতিদিন ৫ লাখ ডিম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে আফিল ফার্ম উৎপাদন করে ৪ লাখ। প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খরচ সাড়ে সাত টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ছয় টাকা। যোগ করেন আবদুল মুকিত।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা প্রভাবে পোল্ট্রি মুরগির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সাধারণ ক্রেতারা পোল্ট্রি কেনা থেকে বিরত থাকছেন। ফলে খামারীরা উৎপাদিত মুরগীর দাম পাচ্ছেন না। ছোট ছোট খামারীরা ইতোমধ্যে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বড় ব্যবসায়ীরা উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখতে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছেন।

লোকসানে ব্যবসায়িরা ব্যবসা বন্ধের উপক্রম বলে জানিয়েছেন আফিল এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক মাহাবুব আলম লাবলু। তিনি এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের আশু সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

খুলনা বিভাগীয় প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম মোল্লা জানান, করোনার প্রভাবে যশোরাঞ্চলে পোল্ট্রি শিল্পে আঘাত পড়েছে বলে জানতে পেরেছি।

তিনি বলেন, পোল্ট্রির মাংস ও ডিম খেলে কোনো ক্ষতি নেই; বরং উপকার। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু লোক পোল্ট্রির মাংস নিয়ে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি সবাইকে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস খাওয়ার পরামর্শ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *