বাজারে মৌসুমী ফলের সমাহার
‘ফল খান সুস্থ থাকুন’, ‘ভাল ফল দেখে কিনুন’, ‘গাছ পাকা ফল’ এমন হাকডাকে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল কাওয়ান বাজারের আম ও লিচু বিক্রেতা জমির হোসেন। সাতক্ষীরার আম আর সুদূর দিনাজপুরের নামকরা সুুস্বাদু লিচু ‘বেদেনা’ বিক্রি করছিল। মানুষও দাম কষে কিনছিল। কেউ আবার দেখে অন্য দোকানে ছুটছিল। রাজধানীর বড় ছোট এমনকি অলি-গলিতেও এখন মৌসুমি ফলের সমাহার সাজিয়েছে বিক্রেতারা। ঈদের পর থেকেই একটু একটু করে ক্রেতাও বেড়েছে ফলে চাহিদা বেড়েছে মৌসুমি ফলের। তবে দাম নিয়ে একেক স্থানে একেক রকম তথ্য রয়েছে। দাম যেমনই হোক পর্যাপ্ত সরবরাহে বিক্রেতারাও যেমন খুশি মৌসুমি ফলের স্বাদ নিতে ক্রেতাদেরও রয়েছে আগ্রহ। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে বাজারে মৌসুমি ফলের সহজলভ্যতা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সামনে আরও সরবরাহ বাড়বে বলেও জানা গেছে।
জ্যৈষ্ঠের শেষ সপ্তাহ চলছে। মধুমাস জ্যৈষ্ঠে বাজারে আসে হরেক নামের রসালো সুস্বাদু মৌসুমি ফল। এ বছর শুরুর দিকে তেমন একটা ফল বাজারে আসেনি। দুটো কারণ ছিল একটি কিছু ফল বাজারে আসার সময় হয়নি আর দ্বিতীয় কারণ করোনাভাইরাসের কারণে অঘোষিত লকডাউন। তবে এর মধ্যেও যে ফল পাওয়া গেছে তার দামও ছিল বেশি। তবে এখন ফলের দামও আগের চেয়ে কমেছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে সরবরাহও। লকডাউন শিথিল করাসহ সরকারের কৃষিপণ্য বিশেষ করে মৌসুমি ফল সরবরাহ করা নিয়ে নানা উদ্যোগের কারণেই বাজারে প্রতিনিয়ত মৌসুমি ফল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে বাজারে আগের চেয়ে অনেক বেশি ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা গেছে।
রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন মৌসুমি ফলের ছড়াছড়ি। দোকানে আম, লিচু ও কাঁঠালের ছড়াছড়ি। এছাড়াও রয়েছে জাম, জামরুল, তালের শাঁস, লটকন, কামরাঙা, আনারস। এছাড়াও বাজারে আগে আসা তরমুজ, বাঙ্গিও পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল জনকণ্ঠকে বলেন, মৌসুমি ফল আম লিচু বাজারে আসা শুরু হয়েছে। মন্ত্রণালয় যথেষ্ট আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছে। যেসব জেলায় উৎপন্ন হয় সেখানে জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বে মিটিং হয়েছে। আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তার বাস্তবায়ন হচ্ছে। পরিবহনও সহজীকরণ করা হয়েছে। ফুড ফর ন্যাশন ডট গভ ডট বিডি নামে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম করেছি। সব মিলে বাজারে ফল সরবরাহও বেড়েছে ও মানুষ সহজে পাচ্ছে।
বাজারে এখন সবচেয়ে সুলভ মূল্য ও পছন্দের ফল রসালো আম। রাজশাহী, চাঁপাই, সাতক্ষীরার বিখ্যাত আমগুলো ঢাকায় এসেছে। রোজার শুরুতে আম পাওয়া গেলেও বিক্রি হতো তিন’শ টাকার ওপরে কেজিতে। সেই আম এখন অনেক মিষ্টি এবং দাম কেজিতে ৭০-৮০ টাকা। কোথাও ১০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি হিমসাগর আম রয়েছে। এছাড়াও গোপালভোগ পাওয়া যাচ্ছে। ল্যাংড়া, রুপালি, হাড়িভাঙা জাতের আমগুলো দ্রুতই বাজারে মিলবে। কোথাও কিছুটা আগাম ফলন বাজারেও এসেছে। কাওয়ান বাজারের ফল বিক্রেতা জসিম বলেন, রোজার মাসে ফলের চাহিদা থাকলেও এবার সেটি দেখা যায়নি। ফলও তখন বাজারে এসেছে কম। ঈদের পর থেকে বাজারে ফল বেশি আসছে। রোজা শেষ মানুষ বেশি বেশি কিনছে। সামনে আরও সরবরাহ বাড়লে ফলের দাম আরও কমে যেতে পারে বলেন তিনি।
এদিকে মৌসুমি ফল নিয়ে দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ যেমন বেড়েছে সে হিসেবে দাম আরও কম হওয়া দরকার। কিন্তু দাম যেন কমছে না। আর বিক্রেতারা বলছেন, লকডাউনের কারণে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে ফলের। তারপরও দাম কমেছে সামনে আরও কমবে। ওয়াইজঘাট ফল ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পর থেকে ক্রমেই ফলের সরবরাহ বাড়ছে। এছাড়াও দামও আগের চেয়ে অনেকটা কমেছে। এদিকে বাজারে কাঁঠালের সরবরাহ এখনও ব্যাপকহারে শুরু হয়নি। বিক্রেতারা বলেন, যদিও কাঁঠাল পাওয়া যাচ্ছে তবে ১০-১২ দিন পর ব্যাপকহারে কাঁঠাল আসবে বাজারে। কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত গাজীপুর, ময়মনসিংহের ভালুকা। এছাড়াও টাঙ্গাইল, রাঙ্গামাটিতে প্রচুর কাঁঠাল উৎপাদন হয়। জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রযুক্তিনির্ভর আগামী ‘এক শপ’ এ্যাপস (foodfornation.gov.bd) চালু করেছে। কৃষিমন্ত্রী এ্যাপসটি উদ্বোধন করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।